দাম বাড়ার খবরে পাল্লা পাল্লা পেঁয়াজ কিনছেন মানুষ

বাজারে পেঁয়াজ কিনতে মানুষের হিড়িক পড়ে গেছে। ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার রংপুর নগরের সিটি বাজারের একটি খুচরা দোকানে।মঈনুল ইসলাম

রাজশাহী নগরের মণি চত্বর বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাজীব হোসেন। প্রতিদিন ভোরে এসে আড়ত থেকে দুই বস্তা দেশি ও দুই বস্তা ভারতের পেঁয়াজ কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করেন তিনি। মঙ্গলবার ভোরে আড়তে গিয়ে জানতে পারলেন, এক রাতের ব্যবধানে মণপ্রতি পেঁয়াজের দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বেড়েছে। তাই আর দেশি পেঁয়াজ কেনেননি। শুধু ভারতীয় দুই বস্তা পেঁয়াজ কিনেছেন। রাজীব জানান, সকাল ১০টার মধ্যে তিনি এক বস্তা বিক্রি করে ফেলেছেন। পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে। এই খবর শুনে সবাই পাল্লা পাল্লা পেঁয়াজ কিনছেন।
ভারত সরকার গতকাল সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করায় দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। এক রাতের ব্যবধানে দেশের বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমপক্ষে ২০ টাকা করে বেড়েছে। মানুষজন বেশি করে কিনে রাখতে ভিড় করছেন পেঁয়াজের দোকানে। বাজার নিয়ন্ত্রণে কোথাও কোথাও প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করেছেন।

মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী নগরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে দুই ধরনের পেঁয়াজই সোমবারের চেয়ে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন দোকানিরা। তবে এত দিন বাজারে দেশি পেঁয়াজে ভরপুর থাকলেও এদিন দোকানিদের ঢালাতে ভারতীয় পেঁয়াজ বেশি দেখা গেছে। দেশি পেঁয়াজ মজুত রাখতে এই কৌশল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিব তৌফিকুর রহমান জানিয়েছেন, শিগগিরই মিয়ানমান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। এই প্রক্রিয়া চলছে। পেঁয়াজের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য আড়তদারদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
রাজশাহীর মণি চত্বর বাজারের কয়েকটি দোকানে লক্ষ করা গেছে, দু–এক কেজি করে কেউ আর পেঁয়াজ কিনছেন না। এই বাজারে পেঁয়াজ বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দর–কষাকষিও করতে দেখা যায়নি। মোতালেব হোসেন নামের এক ব্যক্তি ওই বাজার থেকে কিনলেন পাঁচ কেজি পেঁয়াজ। তিনি বলেন, দুই দিন আগেও বাজারে দেশি পেঁয়াজ ছিল। আজ বাজারে সেই পেঁয়াজ উধাও হয়ে গেছে। এবারও পেঁয়াজ নিয়ে ভুগতে হবে। আবদুস সালাম নামের এক সবজি ব্যবসায়ী বলেন, তিনি পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেবেন। গত বছর পেঁয়াজ বিক্রি করে জরিমানা গুনতে হয়েছিল। এবারও তাই হবে। তাই পেঁয়াজ বাদে অন্য সবজিগুলো তিনি বিক্রি করবেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, তাঁরা বাজার মনিটর করেছেন। ব্যবসায়ীরা তাঁদের ক্রয় রসিদ দেখিয়েছে ৭৫ টাকা করে। পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা রাখার অভিযোগে নগরের উপশহরে একটি দোকানিকে তাঁরা তিন হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।

বাজারে পেঁয়াজ কিনতে মানুষের হিড়িক পড়ে গেছে। ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার রংপুর নগরের সিটি বাজারের একটি খুচরা দোকানে।
প্রথম আলো

হুমড়ি খেয়ে পেঁয়াজ কিনছেন মানুষ
মঙ্গবার বেলা ১১টার দিকে রংপুর নগরের সিটি বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান হয়। এ সময় পাইকারি ও খুচরা বাজারের অধিকাংশ দোকানে মূল্যতালিকা টাঙানো ছিল। টাঙানো তালিকা থেকে জানা গেছে, খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি ৭০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা। আর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি ৬৫ টাকা, ভারতীয় ৪৫ টাকা।
ক্রেতারা বলছেন, খুচরা বাজারে এক দিন আগেও সোমবার দেশি পেঁয়াজ কেজি ৬০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজি ৫৫ টাকা ও ভারতীয় ৩৫ টাকা।
মঙ্গলবার ভ্রাম্যমাণ আদালত বাজার থেকে চলে যাওয়ার পর এই পেঁয়াজের দাম খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৮০ টাকায়, ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকায়। এরপরও এই বর্ধিত দরেই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পেঁয়াজ কিনছেন। অবস্থা দেখে মনে হয়েছে যেন বাজারে আর পেঁয়াজ পাওয়া যাবে না।
সিটি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, ‘এক ঘণ্টার কম সময়ে ২২ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। এত কম সময়ে এর আগে এমন বিক্রি হয়নি।’
এদিকে পেঁয়াজের দাম ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় সিটি বাজারে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণির ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় প্রত্যক্ষ করা গেছে। ক্রেতারা দরদাম যাচাই-বাছাই না করেই বেশি বেশি করে পেঁয়াজ কিনছেন। পেঁয়াজ কিনতে আসা মানুষের ভিড়ে কথা হয় অনেক ক্রেতার সঙ্গে। জাহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘সব সময় বাজারে আসাও কষ্টকর। এ ছাড়া প্রতিদিনই তো পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। তাই একটু বেশি করে পেঁয়াজ কিনেছি।’

কুষ্টিয়ায় আড়ত থেকে পেঁয়াজ উধাও
ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের খবরে হঠাৎ করেই কুষ্টিয়া পৌর বাজারের আড়ত থেকে পেঁয়াজ উধাও হয়ে গেছে। সকালে খুচরা বিক্রেতা প্রতিদিনের মতো পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে যান। এক রাতের ব্যবধানে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজও ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজিপ্রতি দাম বেড়ে গেছে।
জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, কুষ্টিয়া পৌরবাজারে সাতজন আড়তদার রয়েছেন। সেখানে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ মণ পেঁয়াজ কেনাবেচা হয়। সোমবার বিকেলেও সেখানে প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। খুচরা পর্যায়ে ছিল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। কিন্তু রাতের খবরের পর মঙ্গলবার সকালে পাইকারি পর্যায়ে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে। খুচরা পর্যায়ে যা পড়ে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। তিনি আরও জানান, সকালে কোনো আড়তেই তেমন কোনো পেঁয়াজ দেখা যায়নি। আড়তদারেরা রাতের মধ্যেই সব পেঁয়াজ সরিয়ে ফেলেছেন।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে। আড়তদারেরা কীভাবে কোথায় পেঁয়াজ সরিয়ে ফেললেন, সেটা খুঁজে বের করা হবে। জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, কাল থেকে প্রতিদিন বাজারে একজন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। কৃষকদের কাছ থেকে কেনা থেকে শুরু করে আড়ত, ব্যবসায়ী ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রির দরদাম তদারকি করবে। কেউ মজুত বা অতিরিক্ত দাম নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পেঁয়াজের সরবরাহ কম আছে। এর মধ্যে সাধারণ মানুষও অতিরিক্ত পেঁয়াজ কিনছেন। তাই দামও বেড়ে গেছে।
মানিক মিয়া, ব্যবসায়ী ঝালকাঠি

বেশি বেশি পেঁয়াজ কিনছেন মানুষ
মঙ্গলবার সকালে ঝালকাঠি শহরের বানিয়াপট্টি এলাকার আকন ট্রেডার্স, মানিক ট্রেডার্স, খন্দকার ট্রেডার্সে গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজ কেনার জন্য ভিড় করেছেন অবস্থাসম্পন্ন মানুষজন। এসব দোকানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, যা গত রাতেও বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়, যা গত রাতেও বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়।
বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মোস্তফা আনোয়ার বলেন, ‘আমরা হুজুগে বাঙালি। ভারত রপ্তানি নিষিদ্ধ করতেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিলেন। সাধারণ মানুষও অতিরিক্ত পেঁয়াজ কিনে সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। টিসিবি থেকেও পর্যাপ্ত পেঁয়াজ দেওয়া হচ্ছে না। সরকারকে এ বিষয়ে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ মানিক ট্রেডার্সের মালিক মানিক মিয়া বলেন, পেঁয়াজের সরবরাহ কম আছে। এর মধ্যে সাধারণ মানুষও অতিরিক্ত পেঁয়াজ কিনছেন। তাই দামও বেড়ে গেছে।

ময়মনসিংহ নগরের মেছুয়া বাজার ও নতুন বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। মেছুয়া বাজারে অতিরিক্ত মূল্য রাখার পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে না পারায় একজন আড়তদার ও একজন খুচরা বিক্রেতাকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ময়মনসিংহে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ
ময়মনসিংহ নগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাজারগুলোতে আজ মঙ্গলবার ৮০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। বিভাগের শেরপুর, জামালপুর ও নেত্রকোনা জেলাতেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। আজ জামালপুর ও নেত্রকোনা জেলার খুচরা বাজারে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। শেরপুর জেলায় সর্বোচ্চ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
হঠাৎ করেই পেঁয়াজের বাজার অস্থির হওয়ায় ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার নগরের মেছুয়া বাজারে অভিযান চালানো হয়। এতে ২ জন ব্যবসায়ীকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে।
সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, দুই সপ্তাহ আগেও ময়মনসিংহের বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম ছিল ২৪ থেকে ৩০ টাকা কেজি। পরে চার থেকে পাঁচ দিন ধরে ময়মনসিংহে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। সর্বশেষ গত রোববার ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাজারে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। তবে মঙ্গলবার ময়মনসিংহের বিভিন্ন খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ।
ময়মনসিংহ নগরের মেছুয়া বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি আড়ত অবস্থিত। বাজারের তিনজন আড়তদার জানান, মেছুয়া বাজারে মঙ্গলবার ভোরেও ভারতীয় পেঁয়াজ এসেছে। সেসব পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫৩ টাকা করে দাম পড়েছে। তাঁরা পাইকারি ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন। আর খুচরা বাজারে ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। অসাধু কেউ কেউ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রির চেষ্টা করেছে।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ময়মনসিংহ নগরের মেছুয়া বাজার ও নতুন বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। মেছুয়া বাজারে অতিরিক্ত মূল্য রাখার পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে না পারায় একজন আড়তদার ও একজন খুচরা বিক্রেতাকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

আমরা আগের পেঁয়াজ কিনে রেখেছিলাম আজ দুপুর পর্যন্ত ৪৫ টাকায় বিক্রি করেছি। পরে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির খবর শুনেছি। এখন ৫৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করছি।
নন্দ কিশোর দে, খুচরা ব্যবসায়ী, সিলেট

সিলেটে এক দিনে দ্বিগুণ দাম
সিলেট বিভাগে এক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। সিলেটের পাইকারি বাজারে সোমবার বিকেল পর্যন্ত পেঁয়াজ কেজিতে ৩৫-৩৮ টাকায় বিক্রি হলেও রাতের পর থেকে বাড়তে শুরু করে দাম। মঙ্গলবার বেলা ৩টায় সে দাম ঠেকেছে ৬৫ টাকায়। খুচরা বাজারে বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। গত সোমবার ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা।
সিলেটের বৃহৎ পাইকারি বাজার কালীঘাটে মঙ্গলবার বেলা ৩টা পর্যন্ত পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সোমবার বিকেল পর্যন্ত তাঁরা পেঁয়াজ কেজিতে ৩৫-৩৮ টাকায় বিক্রি করেছেন। সন্ধ্যার পর থেকে ব্যাপারীরা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করেছেন।
নগরের মির্জা জাঙ্গাল এলাকার হিমানী স্টোরের ব্যবসায়ী নন্দ কিশোর দে বলেন, ‘আমরা আগের পেঁয়াজ কিনে রেখেছিলাম আজ দুপুর পর্যন্ত ৪৫ টাকায় বিক্রি করেছি। পরে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির খবর শুনেছি। এখন ৫৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করছি।’
বিভাগের মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায়ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। বিভাগের মৌলভীবাজার জেলায় সোমবার পর্যন্ত খুচরা বাজারে ৪০-৪২ টাকায় বিক্রি হলেও মঙ্গলবার সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০-৭৫ টাকায় টাকায়। অন্যদিকে সুনামগঞ্জ জেলায় সোমবার পাইকারি বাজারে ৩৫-৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও মঙ্গলবার সেটি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। হবিগঞ্জের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ থাকলেও খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের সংকট দেখিয়ে দাম বৃদ্ধি করছেন।
হবিগঞ্জের ঝিলপাড় এলাকার বাসিন্দা চন্দন বৈদ্য জানান, পেঁয়াজের দাম বাড়ছে শুনে সকালে মহল্লার দোকানে কিনতে গিয়েছিলেন, সেখানে বিক্রেতা কেজিতে ৫০ টাকা করে দুই কেজি দিয়েছিলেন। পরে দুপুরে আবারও কিনতে গেলে পেঁয়াজ নেই জানিয়ে কেজিতে ৮০ টাকা দরে দেড় কেজি দিয়েছেন ওই বিক্রেতা।
সিলেটের বাজার কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ মোর্শেদ কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে যাতে দাম বৃদ্ধি না করতে পারে, সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি।’

দাম বাড়ায় পেঁয়াজ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। মঙ্গলবার দুপুরে রাজবাড়ীর পেঁয়াজের বাজারে।
প্রথম আলো

সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস
মঙ্গলবার রাজবাড়ীর বাজার ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলোতে সাধারণত দুই ধরনের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপর দিকে নষ্ট বা আংশিক পচা পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা করে। তবে বাজারে দোকানগুলোতে ভারতীয় পেঁয়াজ নেই।
ক্রেতা খন্দকার নুরুজ্জামান (৫৫) বলেন, ‘করোনার কারণে আয় কমে গেছে। হাতে আগের মতো টাকাপয়সা নেই। ব্যয় কিন্তু আগের মতোই আছে। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক হিসাবকিতাব করে চলতে হয়। এখন সরবরাহ কমের অজুহাতে দাম বাড়ানো হয়েছে। আমরা চলব কীভাবে এই কথা কেউ ভাবছে না।’
বিনোদপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ ফয়সাল বলেন, গত সপ্তাহে ভালো পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ৫০ টাকা। অথচ পাঁচ-সাত দিনের ব্যবধানে এখন প্রতি কেজি ৮০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। কাঁচা মরিচের দামও বেড়েছে। পেশায় দিনমজুর আনজু সরদার (৬০) বলেন, করোনায় আর্থিক সংকটের কারণে কম দামে আংশিক নষ্ট পেঁয়াজ কিনতেন তিনি। কিন্তু হুট করে দাম বেড়ে গেল। এখন পচা পেঁয়াজও কিনতে হচ্ছে ৫৫ টাকা করে।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সহিদ মোল্লা বলেন, ‘আমাদের বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। এতে করে বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে ক্রেতাদের ক্ষতি হচ্ছে। আবার আমাদেরও ক্ষতি হচ্ছে। কারণ, আগে যাঁরা এক কেজি পেঁয়াজ কিনতেন, তাঁরা এখন আধা কেজি কিনছেন।’
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ—এমন খবরে এক রাতেই কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২০ টাকা। ৬০ টাকা কেজির পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর কারণ বলতে পারছেন না বিক্রেতারা।
ধানগড়া এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আরমান আলী বলেন, ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজির পেঁয়াজ ৬০ টাকা হওয়ার পর থেকেই দিনের প্রয়োজন যতটুকু, ততটুকুই কেনেন। এখন দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের আরও কষ্ট হবে। রিকশাচালক পরেশ চন্দ্র বলেন, দিন দিন আয় কমছে কিন্তু নানা অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।
স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিম রেজা খন্দকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ জেনেই কেজিপ্রতি ২০ টাকা দাম বাড়ল। কিন্তু মহাজন ও পাইকারদের কাছে থাকা আগের পেঁয়াজের দাম বেশি হয় কীভাবে? বাজার তদারকির অভাবের কারণেই ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ান।
ধানগড়া বাজারের সবজি ব্যবসায়ী নাজির হোসেন বলেন, কেনা বেশি, তাই বিক্রিও করা হচ্ছে বেশি দামে। ব্যবসায়ী আকুল হোসেন বলেন, মোকামে দাম বাড়ার কারণে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর, প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, ঝালকাঠি, ময়মনসিংহ, রাজবাড়ী, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও সিলেট অফিস]