দাফনের দুই দিন পর জানা গেল, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে
জয়পুরহাট শহরের রূপনগর এলাকার বাসিন্দা শেফালি বেওয়া (৬৫) গত শনিবার রাতে নিজ বাড়িতে মারা যান। শেফালি বেওয়ার বাড়ির ভাড়াটে ঝরনা আখতার নিলা শেফালির স্বজনদের জানিয়েছিলেন, তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন। স্বাভাবিক মৃত্যু ভেবে স্বজনেরা তাঁকে দাফন করেছিলেন। এ ঘটনার দুই দিন পর জানা গেল, শেফালি বেওয়ার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। তাঁর গরু বিক্রির বায়নার ৩০ হাজার টাকা চুরিতে বাধা দেওয়ায় শেফালিকে হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগ শেফালি বেওয়ার ভাড়াটে স্ত্রী ঝরনা আখতারের বিরুদ্ধেই।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই জালাল শেখ বাদী হয়ে আজ মঙ্গলবার জয়পুরহাট সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। পুলিশ মামলার একমাত্র আসামি ঝরনা আখতারকে (২১) গ্রেপ্তার করেছে। তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শেফালি বেওয়াকে হত্যার কথা স্বীকার করে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়েছেন বলে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
পুলিশ মামলার একমাত্র আসামি ভাড়াটিয়া ঝরনা আখতারকে (২১) গ্রেপ্তার করেছে। তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শেফালি বেওয়াকে হত্যার কথা স্বীকার করে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, শেফালি বেওয়া তাঁর বাড়িতে একা বসবাস করতেন। প্রায় এক বছর আগে ঝরনা আখতার শেফালির বাড়ি ভাড়া নেন। ঝরনা জর্ডান যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় বাড়ির মালিক শেফালি বেওয়ার কাছে টাকাপয়সা ধার চাইতেন। গত ১৩ মার্চ শেফালি বেওয়া তাঁর গরু বিক্রির জন্য গরুর পাইকারের কাছে ৩০ হাজার টাকা বায়না নেন। গরু বিক্রির বায়নার ৩০ হাজার টাকা শেফালি বেওয়া তাঁর ঘরের শোকেসের ড্রয়ারে রাখেন। ১৪ মার্চ সকালে ভাড়াটে ঝরনা মুঠোফোনে শেফালি বেওয়ার ভাই জালাল শেখকে জানান, তাঁর বোন ঘরের দরজা খুলছেন না। তখন স্বজনেরা এসে দেখেন, ভেতর থেকে শেফালির ঘরের দরজা আটকানো। ভাড়াটে ঝরনার সহায়তায় স্বজনেরা পকেট দরজা দিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে দেখেন, শেফালি বেওয়া রক্তাক্ত অবস্থায় চৌকির ওপর পড়ে আছেন। তখন ভাড়াটে ঝরনা শেফালি বেওয়ার স্বজনদের বলেন, শেফালি স্ট্রোক করে শোকেসের গ্লাসের সঙ্গে মাথা ও মুখে আঘাত পেয়ে মারা গেছেন। স্বাভাবিক মৃত্যু ভেবে শেফালি বেওয়াকে দাফন করা হয়।
আমার বোন স্ট্রোক করে মারা গেছেন ভাড়াটের এমন কথা শুনে আমরা বিশ্বাস করেছিলাম। পরে বোনের মৃত্যু সম্পর্কে বিভিন্ন সময় ভাড়াটে ঝরনার ভিন্ন ভিন্ন তথ্যে সন্দেহ হলে আমরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। এরপর আমার বোনের মৃত্যুর আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে।
এরপর থেকেই ঝরনা আখতার শেফালির মৃত্যু সম্পর্কে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিচ্ছিলেন। গতকাল সোমবার রাতে শেফালির স্বজনেরা ঝরনা আখতারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি লোকজনের উপস্থিতিতে জানান, জর্ডান যাওয়ার জন্য তাঁর টাকার প্রয়োজন পড়ে। তিনি শনিবার রাত আনুমানিক ১০টা ২০ মিনিটে বাড়ির মালিক শেফালি বেওয়ার ঘরে ঢুকে শোকেসের ড্রয়ারে রাখা গরু বিক্রির বায়নার ৩০ হাজার টাকা নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তা দেখে ফেলে শেফালি বেওয়া বাধা দেন। তিনি শিলনোড়া দিয়ে শেফালি বেওয়ার মাথা ও মুখে আঘাত করে ৩০ হাজার টাকা বের করে নিয়ে একজনের কাছে গচ্ছিত রাখেন।
শেফালি বেওয়ার ভাই জালাল শেখ বলেন, ‘আমার বোন স্ট্রোক করে মারা গেছেন ভাড়াটের এমন কথা শুনে আমরা বিশ্বাস করেছিলাম। পরে বোনের মৃত্যু সম্পর্কে বিভিন্ন সময় ভাড়াটে ঝরনার ভিন্ন ভিন্ন তথ্যে সন্দেহ হলে আমরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। এরপর আমার বোনের মৃত্যুর আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। এ ঘটনায় ভাড়াটে ঝরনা আখতারের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেছি।’
জয়পুরহাট সদর থানার পরিদর্শক হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আজ মঙ্গলবার সকালে ঝরনা আখতারকে ভাড়া বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর বাড়ির মালিক শেফালি বেওয়াকে শিলনোড়া দিয়ে আঘাত করে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন। শেফালি বেওয়ার চুরি যাওয়া ৩০ হাজার টাকা তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য তাঁকে আদালতে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।