দখলে স্বাস্থ্যের আবজালের ‘ক্রোক’ করা বাড়ি

আবজাল হোসেনের ফরিদপুর শহরের বাড়ির সামনে টাঙানো ক্রোক বিজ্ঞপ্তি উধাও
ছবি: প্রথম আলো

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেই আবজাল হোসেনের ফরিদপুর শহরের বাড়ির সামনে টাঙানো ক্রোক বিজ্ঞপ্তিটি উধাও হয়ে গেছে। ওই বাড়িতে এখন বসবাস করছেন তাঁর বোন ও ভগ্নিপতি।


গতকাল বৃহস্পতিবার ওই বাড়ির সামনে গিয়ে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।


আবজাল ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার সাবেক স্টেনোগ্রাফার। তিনি রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্যবসা করেন।

আবজাল হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে আবজাল ও তাঁর স্ত্রী রুবিনার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ জুন পৃথক দুটি মামলা করে দুদক। একটি মামলায় অবৈধভাবে অর্জিত ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং আরেকটি মামলায় আবজালের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়। গত বছর জানুয়ারিতে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদসহ আইনি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার একপর্যায়ে পালিয়ে যান আবজাল দম্পতি।


২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি আবজাল ও তাঁর স্ত্রী রুবিনা খানমের সম্পদ জব্দ (ফ্রিজ) করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালতের আদেশে আবজাল দম্পতির স্থাবর-অস্থাবর যাবতীয় সম্পদ হস্তান্তর বা লেনদেন বন্ধ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়।

আবজালের স্থায়ী নিবাস ফরিদপুরে। ফরিদপুর শহরের সোহরাওয়ার্দী সরোবরের পূর্ব পাশে সাড়ে ১০ শতাংশ জমির ওপর আবজালের একটি দোতলা বাড়ি আছে। আবজাল ফরিদপুরে আধুনিক নকশায় তৈরি ওই বাড়িতেই থাকতেন। ওই বাড়িতে এলে ফরিদপুরের প্রভাবশালী লোকজনের সম্মানে ভোজেরও আয়োজন করতেন তিনি।

আদালতের আদেশে গত বছরের জানুয়ারিতে বাড়িটির দুই পাশে দুটি ‘ক্রোক বিজ্ঞপ্তি’ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন তা উধাও
ফাইল ছবি

আদালতের আদেশে গত বছরের জানুয়ারিতে ওই বাড়ির দুই পাশে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়ের উদ্যোগে দুটি ‘ক্রোক বিজ্ঞপ্তি’ টাঙিয়ে দেওয়া হয়। স্টিলের অ্যাঙ্গেলের কাঠামোতে ধাতব পাতের ওপর বিজ্ঞপ্তি সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাতে লেখা ছিল, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়ের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞ মহানগর দায়রা জজ আদালতের ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারির আদেশমূলে নিম্নবর্ণিত সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে। সর্বসাধারণের জন্য আদালতের এ আদেশ প্রচার করা হলো।’


এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ওই ক্রোক বিজ্ঞপ্তি টাঙানোর কিছুদিন পরেই তা ছিঁড়ে ফেলা হয়। গতকাল গিয়ে ওই বিজ্ঞপ্তি দুটির কোনোটিই দেখা যায়নি। তবে স্টিলের অ্যাঙ্গেলের কাঠামোর সঙ্গে ধাতব পাতটি অক্ষত রয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, ওই বাড়িতে বর্তমানে আবজালের বোন নাসরিন ও ভগ্নিপতি মো. হালিম বসবাস করেন।


এ বিষয়ে দুদকের পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, ওই বাড়িতে দুদকের পক্ষ থেকে ক্রোক বিজ্ঞপ্তি সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বাড়িতে কারও থাকার কথা নয়। ক্রোক বিজ্ঞপ্তি উধাও হয়ে যাওয়া ও বাড়িতে লোকজন থাকার অভিযোগটি দুদক খতিয়ে দেখবে বলে তিনি জানান।