সরেজমিন: হবিগঞ্জ
‘ছান্দে’র শাসনে তটস্থ বানিয়াচংয়ের মানুষ
বানিয়াচংয়ে বছরের পর বছর চলে আসছে বিকল্প বিচারব্যবস্থা, ছান্দ সরদারের শাসন। মানুষ অতিষ্ঠ হলেও নির্বিকার প্রশাসন।
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার বানিয়াচং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জয়নাল আবেদীন খান। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি এলাকার দু-তিনটি পারিবারিক দ্বন্দ্বের মীমাংসা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু মহল্লা সরদারের মাধ্যমে কেন এই মীমাংসা করলেন না, এ কারণে তাঁকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। মহল্লা সরদারের অধীন বিচার না মানায় সমাজচ্যুত করা হয়েছে আরও দুটি পরিবারকে।
জয়নালের গ্রামের নাম তোপখানা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এই গ্রামের মোট ছয়টি পরিবারকে সমাজচ্যুত ঘোষণা করে একঘরে করে রেখেছেন স্থানীয় ‘ছান্দ সরদারেরা’। ফলে তাঁরা স্থানীয় বাজারে সওদা করতে পারছেন না। গ্রামের নলকূপ থেকে পানি নিতে দেওয়া হয় না। গ্রামের কাউকে ওই ছয় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে দেখলে তাঁদেরও সমাজচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয়। দুই বছর ধরে এভাবে চলছে।
ছান্দ সরদার প্রথার এই দাপট দেখা গেছে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে। এই উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়ন রয়েছে, বাসিন্দা ৩ লাখ ৩৫ হাজার। দেশের সবচেয়ে বড় গ্রাম বানিয়াচং এখানেই অবস্থিত। এই উপজেলার গ্রামগুলোতে ‘ছান্দ’ নামের এই প্রথা যুগ যুগ ধরে চলছে। যার মাধ্যমে ছোটখাটো বিরোধ থেকে শুরু করে বড় ধরনের মারামারির ঘটনা পর্যন্ত নিষ্পত্তি করার রীতি চলে আসছে। বাসিন্দারাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্রাম আদালত কিংবা পুলিশের দ্বারস্থ না হয়ে ছান্দ সরদারের দ্বারস্থ হচ্ছেন। নানা সময়ে ছান্দ সরদাররা প্রভাবিত হয়ে সালিসে সঠিক ও সুষ্ঠু বিচার করছেন না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁদের দাপটের কারণে কেউ কোনো প্রতিবাদও করতে পারেন না।
স্থানীয় প্রশাসন ও ছান্দ–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বানিয়াচংয়ে গ্রাম আদালতে ১৫০টি মামলা পরিচালনাধীন ছিল। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১১৭টি। গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ১৪৫টি মামলা পরিচালনাধীন ছিল। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৮০টি। এর বিপরীতে চলতি বছরের শুরু থেকে জুন মাস পর্যন্ত ছান্দের মাধ্যমে অন্তত চার শ ঘটনার সালিস-বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে।
এলাকার কয়েকজন সচেতন বাসিন্দা জানিয়েছেন, ছান্দ প্রথা পরিচালনাকে ঘিরে নেতৃস্থানীয়দের দ্বন্দ্বে প্রায়ই এলাকায় অস্থিরতা, সহিংসতা ও বিরোধিতার ঘটনা ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশাসনে অভিযোগ দায়ের এবং মামলা-মোকদ্দমার ঘটনাও ঘটছে। গত দুই বছরে ছান্দকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি অন্তত ১০টি মামলার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন ও থানায় ২০টি লিখিত অভিযোগ পড়েছে। তবে এর বাইরে বেশ কিছু ঘটনা ঘটলেও ছান্দ সরদারদের ভয়ে ভুক্তভোগীরা তা নিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি।
ছান্দ প্রথা কী?
এক বা একাধিক গ্রাম বা মহল্লা নিয়ে একেকটি ছান্দ গঠিত হয়। প্রতিটি ছান্দের অধীনে থাকা গ্রামে একজন করে ‘সরদার’ থাকেন। তাঁদের বলা হয় ‘মহল্লা সরদার’। আবার প্রতিটি ছান্দে একজন করে ‘সরদার’ থাকেন। তাঁদের বলা হয়ে থাকে ‘ছান্দ সরদার’। মূলত এই ছান্দ সরদারই ওই ছান্দের মানুষদের ঝগড়া-বিবাদ-সমস্যার সমাধান করেন। তবে বানিয়াচংয়ে কবে থেকে এ প্রথার শুরু, তা অনেক প্রবীণ ব্যক্তিও সঠিকভাবে বলতে পারেননি।
ষাটোর্ধ্ব কয়েকজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এ প্রথার শুরু। তাঁরাও ছোটবেলা থেকে এমন প্রথা দেখে আসছেন। বর্তমানে বানিয়াচংয়ে ১২ থেকে ১৪টি ছান্দ রয়েছে। একটি ছান্দ মানে একটি কমিটি। এ কমিটি এলাকার সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি সালিস ও বিচারকাজ করে থাকে। অতীতে ছান্দের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও ন্যায়সংগত বিচারাদি সম্পন্ন হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ছান্দ ঘিরে নানা ধরনের অন্যায় ও অনিয়ম হচ্ছে।
যেভাবে চলে ছান্দের কার্যক্রম
স্থানীয় লোকজন জানান, মহল্লা কিংবা ছান্দের সরদার হওয়ার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীরা মুখিয়ে থাকেন। কারণ, এই সরদারই এলাকার যাবতীয় সমস্যা দেখভাল করেন, সামাজিক অনুষ্ঠান ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেন। অধিকাংশ ছান্দের রয়েছে নিজস্ব তহবিল এবং আয়ের ব্যবস্থাও। বিশেষত বর্ষা মৌসুমে ছান্দের অধীনে থাকা জলমহাল ইজারা দিয়ে মোটা অঙ্কের একটি তহবিল গঠন করা হয়। এসব আয় থেকে বিভিন্ন উপায়ে প্রচুর সম্মানী অর্জনের বিষয়টিও জড়িত থাকায় অনেকেই সরদার হতে মুখিয়ে থাকেন।
জানা গেছে, সাধারণত বর্ষা মৌসুমে বানিয়াচংয়ের বিভিন্ন এলাকা পানিতে ভেসে যায়। ভাসমান ওই পানিতে হাওর ও নদ–নদীর মাছ আসে। তলিয়ে যাওয়া জমি মাছ শিকারের জন্য ছান্দ সরদার ইজারা দেন। ইজারা বাবদ একেকটি ছান্দের প্রতিবছর গড়ে ৩০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত আয় হয়। ইজারা থেকে পাওয়া টাকা ছান্দের তহবিলে জমা থাকে, যা ছান্দের সব পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়। বর্ষা মৌসুমে ডুবে থাকা ব্যক্তিগত কৃষিজমিও বাধ্যতামূলকভাবে ছান্দ-সংশ্লিষ্টদের কাছে তুলে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। ব্যক্তিগত ও সরকারি খাসজমি পুরোটাই তখন ছান্দের সরদার ইজারা দিয়ে থাকেন। এই নিয়ম না মানলে তাঁকে ‘একঘরে’ করে রাখার উদাহরণ রয়েছে।
খাসজমিও ইজারা দেয় ছান্দ
উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে বানিয়াচংয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির পাশাপাশি সরকারি খাসজমিও ছান্দের অধীনে নিয়ে ইজারা দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ডকৃত বানিয়াচংয়ের ঐতিহ্যবাহী সাগরদিঘির কিছু অংশও দখল করে ইজারা দেওয়া হচ্ছে। এটি নিয়ে আদালতে মামলাও রয়েছে। এ পুকুরটি নিজেদের দাবি করে বিভিন্ন ছান্দের অধীনে থাকা সাগরদিঘির আশপাশের বাসিন্দারা সরকারের বিরুদ্ধে এ মামলা করেছেন। এ ছাড়া বানিয়াচং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়নে অবস্থিত লক্ষ্মীবাওর হাওরের ব্যক্তিমালিকানাধীন খরতি জঙ্গলটি বর্ষাকালে অনন্য সুন্দর রূপ পায়। এটিও ছান্দের মাধ্যমে প্রতি বর্ষা মৌসুমে ইজারা দেওয়া হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর আমিরখানি মহল্লার একটি সরকারি খাল ছান্দের নেতারা ইজারা দিয়েছেন বলে লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানা।
কথায় কথায় ‘একঘরে’
গত ৯ এপ্রিল উপজেলার তোপখানা গ্রামের বাসিন্দা বশির আহমদ (৪৮) বানিয়াচং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তাতে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি রটনা রটিয়ে স্থানীয় ছান্দ গত বছরের অক্টোবর থেকে তাকে ‘একঘরে’ করে রেখেছে। ফলে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
বানিয়াচং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জয়নাল আবেদীন খান জানান, তুচ্ছ কারণে মহল্লা সরদার তাঁদের তোপখানা গ্রামের ছয়টি পরিবারকে একঘরে করে রেখেছেন। এমনকি ছান্দের বিচারে টাকা নিয়ে অন্যায্যভাবে রায় দেওয়ার অভিযোগও অহরহ রয়েছে। তাঁদের সমাজচ্যুত করার বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ করেও সমাধান পাননি।
তোপখানা মহল্লার সরদার ছিলেন আজমল হোসেন। সম্প্রতি তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর হাফিজ উদ্দিন নামের একজন আপাতত সরদারের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কয়েকটি পরিবারকে একঘরে করে রাখার কথা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, পূর্বপুরুষ থেকে এমন প্রথা চলে আসছে। সে নিয়ম অনুযায়ী, কেউ মহল্লার বিচার না মানলে তাঁর সঙ্গে মহল্লার মানুষজন ওঠাবসা করেন না। তবে যাঁরা একঘরে রয়েছেন, তাঁদের পুনরায় মহল্লায় নিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সাড়ে ৬ মাস আগে বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব নেওয়া এমরান হোসেন বলেন, ‘আমার সময়ে কাউকে একঘরে করে রাখার ঘটনা ঘটেনি। তবে বিগত সময়ে এ সম্পর্কিত কিছু অভিযোগ থানায় এসেছে বলে আমি জেনেছি। ভুক্তভোগী কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নেতৃত্ব ঘিরে বিবাদ
স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ছান্দ পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১ থেকে ৪ নম্বর ইউপিতে ছান্দ খুবই শক্তিশালী। এ চারটি ইউনিয়নে ৫ থেকে ৬টি ছান্দ রয়েছে। যাদের বার্ষিক আয় এক কোটি টাকার কাছাকাছি। তহবিলে প্রচুর টাকা থাকায় এখানে ছান্দ ঘিরে প্রভাবশালীদের তৎপরতাও বেশি। কোথাও কোথাও সরদারদের বিরুদ্ধে ছান্দের টাকা তছরুপের অভিযোগও আছে।
দুই বছর ধরে ‘তিন মহল্লা ছান্দ’-এর সরদার ওয়ারিশ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে ছান্দের অন্তর্ভুক্ত লোকজন টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করে আসছেন। এ পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালের ৩০ জুন এক সভার মাধ্যমে তাঁকে অব্যাহতি দেয় একটি অংশ। কিন্তু এ পদে এখনো তিনি জোর করে বহাল রয়েছেন। ওয়ারিশ উদ্দিন স্থানীয় ২ নম্বর বানিয়াচং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যানও।
ওয়ারিশ উদ্দিনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উপজেলা ও জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়। গত ১৪ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ওয়ারিশ উদ্দিন খানকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, স্থানীয় পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও ছোটখাটো বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সরকারিভাবে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে গ্রাম আদালত কার্যক্রম চালু রয়েছে। রাষ্ট্রস্বীকৃত গ্রাম আদালত প্রথা চালু থাকা অবস্থায় অন্য কোনো প্রথা চালু রাখা আইনসম্মত নয়, যা জনপ্রতিনিধি হিসেবে অবশ্যই মেনে চলা উচিত। তবে ওয়ারিশ উদ্দিন এখনো ছান্দের নেতৃত্ব ছাড়েননি।
ওই ছান্দের নেতৃস্থানীয়দের একজন শেখ রিয়াজ উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ওয়ারিশ উদ্দিন ছান্দের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাতের পাশাপাশি নানা রকমের অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন। সরদার হিসেবে ছান্দের তহবিল থেকে সম্মানীও নিয়েছেন। একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি আইনগতভাবে এই সম্মানীর টাকা গ্রহণ করতে পারেন না। তিনি জানান, তাঁদের ছান্দের অধীনে প্রায় ৪৫০ হাল জমি প্রতি বর্ষা মৌসুমে ইজারা দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা আয় হয়।
আইনজীবীর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাব দিয়েছেন বলে জানান ওয়ারিশ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান হওয়ার অনেক আগে থেকেই ছান্দ সরদারের দায়িত্ব পালন করছি। আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা নাই, চেয়ারম্যান হলে সরদারের কাজ করা যাবে না। এটা তো মন্ত্রণালয়ের কিছু না। এটা এলাকাভিত্তিক একটি প্রথা। মানুষের কষ্ট লাঘবে এবং ছান্দের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থেই এখানে দায়িত্ব পালন করছি।’ তাঁর দাবি, ঐতিহ্য ও প্রথা হওয়ায় অনেকেই গ্রাম আদালতের বদলে ছান্দে এসে সমস্যার সমাধান চান।
আমিরখানি মহল্লার সরদার ফুল মিয়া জানান, তাঁর ঠিক আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরদার ছিলেন আমজাদ হোসেন। তাঁর বিরুদ্ধে ছান্দের ১৯ লাখ টাকা আত্মসাৎসহ নানা বিষয়ে একাধিক মামলা রয়েছে। তবে অভিযুক্ত আমজাদ হোসেন দাবি করেছেন, ছান্দের টাকা আত্মসাৎ নয়, ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে তাঁদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এলাকার কয়েকজন সচেতন বাসিন্দা জানান, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের চেয়েও ছান্দ ও মহল্লার সরদারদের দাপট বেশি। ভোটের রাজনীতিতে এসব ছান্দ ও মহল্লা সরদারদের প্রভাব থাকে বলে জনপ্রতিনিধিদের ছান্দের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে চান না।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহ আগে উপজেলার যাত্রাপাশা ও তারাসই গ্রামের ছান্দের সরদার রেজাউল মোহিত খানের বিরুদ্ধে ছান্দের ১৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। এরপর স্থানীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় ১৫ লাখ টাকা ফিরিয়ে দেন রেজাউল।
সরকারি বিচারব্যবস্থার পাল্টা হিসেবে আরেকটি ‘অসাংবিধানিক’ বিচারপদ্ধতি বছরের পর বছর ধরে বানিয়াচংয়ে চলে এলেও তা বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। বানিয়াচংয়ের ইউএনও মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, এই প্রথা সরকারি কোনো বিধিসম্মত প্রথা নয়। এটা বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলেছেন। তিনি জানান, পাঁচ মাস আগে তিনি ইউএনও হিসেবে যোগ দেওয়ার পর ছান্দের অনিয়ম ঘিরে চারটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন।