‘চোখের সামনে মেয়ের যন্ত্রণা কী যে কষ্টের’
বাড়ির সামনে খেলাধুলা করছিল কয়েক শিশু। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও সেখানে যোগ দিতে পারছিল না শিশু তাসফিয়া (৫)। দাদির কোলে মাথা হেলিয়ে শুয়ে আছে সে। জন্মের পর থেকে কিডনির জটিলতায় ভুগে তার এই অবস্থা। শিশুটির বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সুতিভরট গ্রামে। তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব অবস্থা পরিবারের।
তাসফিয়ার বাবা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, তিন বছর ধরে তিনি মেয়ের চিকিৎসা করাচ্ছেন। চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে নিজের ফসলি জমি ও গরু বিক্রি করে বর্তমানে প্রায় নিঃস্ব অবস্থা। তাসফিয়ার চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার মতো টাকা আর তাঁদের নেই। চোখের সামনে দিন দিন মেয়ের অবস্থা খারাপ হতে দেখে অসহায় বোধ করছেন তিনি। বললেন, ‘চোখের সামনে মেয়ের যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে। রাতে খুব কান্নাকাটি করে। কী যে কষ্ট হয়, কাউকে বোঝানো যাবে না।’ মেয়ের চিকিৎসার জন্য মানুষের সহায়তার অনুরোধ করেন তিনি।
মঙ্গলবার বিকেলে তাসফিয়াদের বাড়িতে কথা হয় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। বাবা তোফাজ্জল হোসেন ও মা নার্গিস বেগম বলেন, এক বছর বয়সে তাসফিয়ার শরীর হঠাৎ ফুলে যায়। চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তার কিডনির রোগ ধরা পড়ে। সেই থেকে নিয়মিত মেয়ের চিকিৎসা চলছে কখনো ঢাকায়, কখনো ময়মনসিংহে। সর্বশেষ তাসফিয়ার চিকিৎসা চলছিল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগ বিভাগের প্রধান আশুতোষ সাহা রায়ের কাছে। ৩১ আগস্টের পর টাকার অভাবে মেয়েকে আর চিকিৎসকের কাছে নিতে পারছেন না বলে জানালেন তাঁরা। গত এক সপ্তাহ ধরে শরীরে পানি এসে তাসফিয়ার শরীর ফুলে আছে।
শিশুটির দাদি রাজিয়া খাতুন বলেন, ‘আমি ১৯৮৮ সাল থেকে ঢাকা শহরে মানুষের বাসায় কাজ করে গ্রামে কিছু জমি কিনেছিলাম। তিনটা গরু ছিল। নাতনির চিকিৎসার খরচ জোগাতে সবকিছু বিক্রি করেছি। এখন আর আমাদের কোনো সম্বল নেই।’
চিকিৎসক আশুতোষ সাহা রায় শিশুটির রোগ সম্পর্কে বলেন, তাসফিয়ার কিডনির সমস্যাকে বলে ‘নেফ্রোটিক সিনড্রোম’। এতে প্রস্রাবে সমস্যা হয় আর ঘন ঘন শরীর ফুলে যায়। নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষা আর ওষুধ সেবন করলে সুস্থ থাকে। শিশুদের বয়স ১২ থেকে ১৩ হলে অনেক সময় এই রোগ পুরোপুরি সেরে যায়। তবে নিয়মিত চিকিৎসা না হলে রোগ ক্রমেই জটিল হতে পারে।