ঘাঘট নদ থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি

রংপুরের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের আরাজি ধর্মদাস এলাকার ঘাঘট নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় আজ বৃহস্পতিবার বালু উত্তোলনকারী আলম মিয়াকে ঘেরাও ও বিক্ষোভ করেন স্থানীয় লোকজন
ছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুর নগরের আরাজি ধর্মদাস পানবাড়ি এলাকায় ঘাঘট নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি এবং সংযোগ সড়ক কেটে ফেলার প্রতিবাদে স্থানীয় জনগণ বালু ব্যবসায়ীকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে স্থানীয় লোকজন বালু উত্তোলনকারী আলম মিয়াকে ঘেরাও করেন।

এদিকে সিটি মেয়র ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় বালু উত্তোলনকারী আলমকে আটক করে পুলিশ।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, ঘাঘট নদ থেকে নগরের তাজহাট এলাকার বাসিন্দা আলম মিয়া দীর্ঘদিন ধরে একটি শ্যালো যন্ত্র বসিয়ে পানবাড়ি সেতুর নিচ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ব্যবসা করছেন। এতে এলাকার আবাদি জমি ভাঙছে। বিভিন্ন সময় বালু উত্তোলনকারী ব্যবসায়ীকে বালু তোলা বন্ধ করার দাবি জানানো হলেও তিনি শুনছেন না। তাই এলাকার ভুক্তভোগী জনগণ বাধ্য হয়ে বালু ব্যবসায়ীকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। রংপুর মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ সহকারী কমিশনার আলতাব হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর পুলিশ পাঠানো হয়। সেই সঙ্গে আমি নিজেও উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করি। ঘটনাস্থল থেকে বালু ব্যবসায়ী আলমকে আটক করা হয়েছে।’

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, যে স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, ওই এলাকায় প্রায় ১০০ পরিবারের বাস। তাঁদের বসতভিটাসহ আবাদি জমি রয়েছে। বালু উত্তোলনের ফলে আবাদি জমি ভাঙছে। আরও কিছু এলাকা ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাই প্রশাসনের কাছে জোর দাবি, এই এলাকা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হোক।

এক বছর ধরে থেমে থেমে বালু উত্তোলন চলছে। প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত ট্রাক-ট্রলি বালু উত্তোলন করা হয় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। প্রতি ট্রাক বালু ১ হাজার ৮০০ এবং প্রতি ট্রলি বালু ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।

ভুক্তভোগী যাঁদের জমি ভেঙে যাচ্ছে বা ইতিমধ্যে নদে বিলীন হয়েছে, এমন ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। কৃষক আজাহার আলীর প্রায় এক একর আবাদি জমির মধ্যে ইতিমধ্যে কিছু জমি নদে বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই স্থানে বালু থেকে উত্তোলন বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে আমাদের আরও অনেক জমি ভাঙনে বিলীন হবে। তাই বাধ্য হয়ে বালু উত্তোলনকারীকে ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানানো হয়।’ এমনি করে কৃষক তমির উদ্দিন, কৃষক জয়নাল আবেদীনসহ আরও অনেকেই জানালেন বালু উত্তোলনের ফলে জমি ভাঙনের কথা।

এ প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এমনিতেই বালু উত্তোলন অবৈধ। এর ওপর সেতুর সংযোগ সড়কের প্রস্থে প্রায় দুই ফুট করে কাটা হয়েছে। এ জন্য অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের বালুমহাল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা বা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ।