ঘন কুয়াশায় পথ ভুলে পদ্মায় ছোটাছুটি করছিল ৬ ফেরি
ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল রোববার রাত থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে সাড়ে নয় ঘণ্টা ফেরি বন্ধ থাকে। এ ছাড়া মাঝনদীতে ছয়টি ফেরি যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে আটকা পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হন যাত্রী ও যানবাহনের শ্রমিকেরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৫টি ফেরি যানবাহন পারাপারে নিয়োজিত রয়েছে। তবে কুয়াশার কারণে নৌপথ দেখতে না পাওয়ায় রোববার রাত থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সূত্র জানায়, রোববার রাত ১০টার পর থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে পদ্মা নদী কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে রাত ১২টার দিকে কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে গেলে দিক হারিয়ে পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে ছেড়ে যাওয়া ছয়টি ফেরি মাঝনদীতে এদিক–সেদিক যেতে থাকে। ফেরিগুলো বাধ্য হয়ে মাঝনদীতে নোঙর করে থাকে। যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে পাটুরিয়া প্রান্তে সাতটি এবং দৌলতদিয়া প্রান্তে দুটি ফেরি পন্টুনে অবস্থান করে।
এদিকে পারাপার বন্ধ থাকায় ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী গাড়ি পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আটকা পড়ে। এসব যাত্রীবাহী বাস পাটুরিয়া-উথলী সংযোগ সড়কে দীর্ঘ সারিতে নদী পারের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে পাটুরিয়ায় টার্মিনাল ও উথলী মোড় এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কুয়াশার তীব্রতা কমে গেলে ফেরি চলাচল পুনরায় শুরু হয়। এ সময় মাঝনদীতে আটকে থাকা ফেরিগুলো যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে গন্তব্যের দিকে যাত্রা করে।
ফরিদপুরগামী এ কে ট্রাভেলস পরিবহনের যাত্রী ইমরুল হাসান (৪০) বলেন, আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদরেই তাঁর গ্রামের বাড়ি, থাকেন ঢাকার মালিবাগে। গ্রামের বাড়িতে যেতে রাত ১০টার দিকে ঢাকার গাবতলী থেকে বাসে ওঠেন। রাত ১২টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটের কাছাকাছি এসে বাসটি আটকা পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ঘন কুয়াশার কারণে ইতিমধ্যে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে বাসের মধ্যেই সারা রাত কাটিয়েছেন।
ঈগল পরিবহনের একটি বাসে করে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা থেকে ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় যাচ্ছিলেন আমিনুল ইসলাম (৫০)। রাত সাড়ে ১১টার দিকে দৌলতদিয়া প্রান্তে শাহ পরান ফেরিতে করে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে কুয়াশার মধ্যে পথ ভুল করে ফেরিটি এদিক–সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। একপর্যায়ে ফেরিটি মাঝনদীতে নোঙর করে। সারা রাত কুয়াশার মধ্যে নদীর মাঝে আটকে থাকার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এই পথ দিয়ে প্রায়ই যাতায়াত করেন। তবে এই রকম দুর্ভোগে আগে পড়েননি।
ভুক্তভোগী কয়েকজন যাত্রীর অভিযোগ, ঘাট এলাকায় রাতেরবেলা ভালো কোনো খাবার হোটেল খোলা থাকে না। সারা রাত তাঁদের অনেককে বিস্কুট-কলা খেয়ে থাকতে হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবহার উপযোগী কোনো শৌচাগারও নেই। নারী যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
পাটুরিয়া ট্রাক টার্মিনালে আটকে থাকা পণ্যবাহী ট্রাকের চালক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রোববার রাত থেকে নদী পারের অপেক্ষায় আছি। কুয়াশায় সারা রাত ফেরি বন্ধ আছিল। ফেরি চলা শুরু হলেও শুধু যাত্রী ও বাস পার করা হচ্ছে। আমাগো কষ্ট কেউ দ্যাখে না।’
ট্রাফিক পুলিশ ও ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ সময় ফেরি চলাচল ও পারাপার বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় যানবাহনের তীব্র চাপ পড়েছে। আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত পাটুরিয়া প্রান্তে দুই শতাধিক যাত্রীবাহী বাস এবং তিন শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সালাম মিয়া বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে সাড়ে নয় ঘণ্টা ফেরি বন্ধ থাকায় ঘাটে যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। তবে যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে যাত্রীবাহী বাসগুলোকে আগে পারাপার করা হচ্ছে।