গ্রামে বসে তিন বোনের অনলাইনে রেস্তোরাঁর ব্যবসা
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তাঁতশিল্পসমৃদ্ধ গ্রাম তামাই। গ্রামের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাকিয়া আফরোজ। তিন বোন আর মা–বাবা নিয়েই তাঁদের সংসার। বোনদের মধ্যে জাকিয়া সবার বড়। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) শেষ করেছেন। স্নাতকোত্তরে ভর্তি হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে সম্ভব হয়নি।
গত বছরের মার্চে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ঢাকা থেকে গ্রামে চলে আসেন জাকিয়া আফরোজ। অলস সময় কাটাতে ভালো লাগছিল না তাঁর। ফেসবুক পেজ খুলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস বাজারজাত করতে শুরু করেন। বেশ ভালো সাড়াও পেলেন।
এরপর পরিবারের সবার সহযোগিতায় গ্রামে অনলাইন রেস্তোরাঁ চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুযায়ী কাজও শুরু করেন। রেস্তোরাঁর নামকরণ করেন তামাই ফুড কার্ট (টিএফসি)। এই ফুড কার্ট থেকে ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর শুধু গ্রামের মধ্যেই খাবার সরবরাহ শুরু করেন।
এসব কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বড় বোন জাকিয়া আফরোজ। সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছেন তাঁর দুই বোন জুলিয়া আফরোজ ও নুসরাত জেরিন। জুলিয়া স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ও নুসরাত দশম শ্রেণির ছাত্রী। মা–বাবার সহযোগিতায় তিন বোনের অনলাইনে রেস্তোরাঁর ব্যবসায় সাফল্য এসেছে।
শনিবার সকালে সরেজমিনে ওই রেস্তোরাঁয় গিয়ে কথা হয় জাকিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার তেমন মূলধন ছিল না। মাত্র ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে কাজ শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ, এখন শুধু আমার গ্রাম নয়, গ্রামের বাইরেও দূরদূরান্ত থেকে অর্ডার আসছে।’
মাত্র পাঁচ মাসে টিএফসি নিজ গ্রামসহ আশপাশের এলাকার সব মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানান জাকিয়া আফরোজ। বলেন, ‘আমার কখনো প্রফেশনালি রান্না শেখা হয়নি। ছোটবেলা থেকে রান্নার প্রতি ঝোঁক থেকেই রাঁধতে পছন্দ করি। সেই রান্নার অভিজ্ঞতাই এখন কাজে লাগছে। এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি করোনাকালে পরিবারকেও সহযোগিতা করতে পারছি। ভবিষ্যতে ব্যবসাটি আরও বড় করার কাজ চলছে।’
আমার তেমন মূলধন ছিল না। মাত্র ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে কাজ শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ, এখন শুধু আমার গ্রাম নয়, গ্রামের বাইরেও দূরদূরান্ত থেকে অর্ডার আসছে।
এ রেস্তোরাঁয় পিৎজা, বার্গার, কাচ্চি বিরিয়ানি, রাইসবোল, পাস্তা, তেহারি, চিকেন ফ্রাই, শর্মা, চাইনিজ খাবারসহ নানা ধরনের খাবার অর্ডার অনুযায়ী তৈরি ও সরবরাহ করা হয়। এখান থেকে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পিৎজা, বার্গার ও রাইসবোল।
এ রেস্তোরাঁয় পিৎজা, বার্গার, কাচ্চি বিরিয়ানি, রাইসবোল, পাস্তা, তেহারি, চিকেন ফ্রাই, শর্মা, চাইনিজ খাবারসহ নানা ধরনের খাবার অর্ডার অনুযায়ী তৈরি ও সরবরাহ করা হয়। এখান থেকে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পিৎজা, বার্গার ও রাইসবোল। পিৎজা বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ২৭৫ টাকায়, রাসইবোল ৯৯ টাকায়, বার্গার ৯৯ থেকে ১৫০ টাকায়। এ ছাড়া সাধ্যের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন খাবার বিভিন্ন দামে চাহিদা অনুসারে বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খাবারের অর্ডার আসতে থাকে। বিকেলে ও শুক্রবারে অর্ডারের পরিমাণ বেশি থাকে। জেলার বেশ কিছু গ্রাম ও শহর থেকে খাবারের চাহিদা আসছে।
মোটরসাইকেলের মাধ্যমে জাকিয়ার বাবা নাছিমুল গণি জুয়েল অর্ডার অনুযায়ী যথাসময়ে খাবার পৌঁছে দেন। দুই বোন ও মা খাবার প্রস্তুত করতে সহায়তা করেন। পাশাপাশি তিন নারী এ ব্যবসায় সহায়ক হিসেবে কাজ করছে
গ্রামপর্যায়ে এমন একটি ডিজিটাল উদ্যোগ সফল হতে পারে প্রথমে আমরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
গ্রামে বসে শুধু একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইনে রেস্তোরাঁ চালিয়ে সফল হওয়া যায় বিষয়টি ভাবতেই অবাক লাগে বলে মন্তব্য করেন জাকিয়া। তিনি বলেন, ‘উদ্যোক্তা হওয়ার পর নিজেকে স্বাধীন মনে হচ্ছে। আগের জীবনটা ছিল ধরাবাঁধা নিয়মের মধ্যে। ভেবে ভালো লাগে, আমাদের কারণে আরও কিছু মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন।’
মেয়ের সাফল্যের বিষয়ে বাবা নাছিমুল গণি বলেন, ‘গ্রামপর্যায়ে এমন একটি ডিজিটাল উদ্যোগ সফল হতে পারে প্রথমে আমরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এখন দেখছি, অনলাইনে বিশাল একটি বাজার আছে। যেখানে দেশের অনেক তরুণ উদ্যোক্তা অংশ নিতে পারেন।’