গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় দুই ‘বিদ্রোহী’ নিয়ে বিপাকে আ.লীগ
একদিকে সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ। অন্যদিকে বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম। তাঁদের টপকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রুহেল আহমদ। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে জাকারিয়া (মুঠোফোন) ও আমিনুল (জগ) স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রুহেল।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভায়। ৩০ জানুয়ারি এখানে ভোট হবে। ৯টি ওয়ার্ডের এ পৌরসভায় মেয়র পদপ্রার্থী হয়েছেন চারজন। অন্যজন হলেন বিএনপির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী। পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত এখানে আওয়ামী লীগের নেতারাই মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এবার প্রভাবশালী দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় জয়-পরাজয়ের হিসাব জটিল হয়ে পড়েছে। গত সোমবার জেলা আওয়ামী লীগ জরুরি সভা করে তাঁদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।
কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোলাপগঞ্জ পৌরসভাটি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বর্তমান সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদের নির্বাচনী এলাকা। সিলেট নগরের কাছাকাছি হওয়ায় গোলাপগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন সব সময়ই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। দলীয় ভোটের পাশাপাশি এখানে গোষ্ঠীভিত্তিক ভোটও প্রার্থীর জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০০১ সালের ১০ মে গোলাপগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয়। প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভার আয়তন ১৭ দশমিক ২৮ বর্গ কিলোমিটার। মোট বাসিন্দা প্রায় ৪০ হাজার। ভোটার ২২ হাজার ৯১৬ জন। ২০০২ সালে প্রথম নির্বাচনে মেয়র হন জাকারিয়া। ২০০৮ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন। এরপর ২০১৫ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল জব্বার চৌধুরী বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের ৩১ মে সিরাজুল মারা গেলে ১১ জুলাই তাঁর পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। একই বছরের ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আমিনুল মেয়র হন। এবার পঞ্চমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, স্থানীয় রাজনীতিতে জাকারিয়া আহমদ আলোচিত এক নাম। তরুণ বয়সে পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর আরও একবার মেয়র হন। তিনি সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ চৌধুরীর বিরোধী হিসেবে পরিচিত। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও তাঁর জয়ের সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
জাকারিয়া বলেন, সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী তখন তাঁর বিরুদ্ধে ছিলেন। এরপরও মাত্র ১৯২ ভোটে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। এবার মনোনয়ন না পেয়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের চাপে প্রার্থী হয়েছেন। এবার জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।
আমিনুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। ভোটারদের আগ্রহেই তিনি প্রার্থী হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ রুহেল আহমদ বলেন, ‘দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় স্বাভাবিকভাবে কিছুটা চাপে আছি। তাঁদের এরই মধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও আমার সঙ্গে আছেন। তাই শেষ পর্যন্ত জয়ের দেখা নিশ্চয়ই পাব।’
আওয়ামী লীগের এ অবস্থাকে কাজে লাগাতে চান বিএনপি। দলের প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘এ সুযোগ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে চাই। এ ছাড়া প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও নাগরিক সেবায় এখানকার বাসিন্দারা পিছিয়ে আছেন। আমি নির্বাচিত হলে পৌরবাসী যথাযথ সেবা পাবেন। এতে ভোটাররা আমার ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন।’