খুলনায় পাটকলশ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের মামলা
খুলনার আটরা শিল্প এলাকায় পাটকলশ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) খানজাহান আলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা প্রায় ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার সংঘর্ষের সময় ও পরে আটক ১৩ জনকে ওই মামলায় নামীয় আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল বিকেল সোয়া ৪টার দিকেই মামলাটি হয়েছে বলে আজ দুপুরে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস। তবে গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে মুঠোফোনে কথা হলে কেএমপির উপকমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন তখন মামলার ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে পারেননি। মামলার ব্যাপারটি জানাজানি হয়েছে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে।
জানতে চাইলে ওসি প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, মামলায় জনগণের জানমালের ক্ষতি, ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। ১৪ জনের নাম উল্লেখ ও প্রায় ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
মামলার নামীয় আসামিরা হলেন বাসদ খুলনার সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত, যশোরের জেজেআই জুট মিলের সাবেক সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন খান, গণসংহতি আন্দোলনের ফুলতলা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক অলিয়ার রহমান, সিপিবির কেন্দ্রীয় সদস্য ও পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের সদস্যসচিব এস এ রশিদ, মহানগর সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, শ্রমিক রবিউল ইসলাম, শেখ রবিউল ইসলাম ওরফে রবি, শামসের আলম, ছাত্র ফেডারেশনের খুলনা মহানগরের আহ্বায়ক আল আমিন শেখ, শ্রমিক নওশের আলী, ফারুক হোসেন, জাহাঙ্গীর সরদার, শহিদুল ইসলাম ও আবুল হোসেন। এর মধ্যে মোজাম্মেল হোসেন খান পলাতক।
গতকাল বেলা ১১টায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী খুলনা আটরা শিল্প এলাকায় খুলনা-যশোর মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ নামের একটি সংগঠন। ওই কর্মসূচিতে খুলনার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন পাটকলের শত শত শ্রমিক অংশগ্রহণ করেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ লাঠিপেটা ও টিয়ার গ্যাস ছুড়ে তা পণ্ড করে দেয়। এ সময় নারীসহ ২০ জনের মতো শ্রমিক আহত হন বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতারা। অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের ৯ জন সদস্য আহত হওয়ার দাবি করা হয়। ওই সংঘর্ষের সময় দুটি বাস ও একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের সময় ইস্টার্ন জুট মিলের ভেতর আটকা পড়েন শ্রমিকসহ পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের নেতা-কর্মীরা। প্রায় দুই ঘণ্টা পর সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় পুলিশ সংগঠনটির আহ্বায়ক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সভাপতি কুদরত-ই-খুদা, ওই সংগঠনের সদস্যসচিব এস এ রশিদ, বাসদ খুলনার সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত, ছাত্র ফেডারেশনের খুলনা মহানগরের আহ্বায়ক আল আমিন শেখ, খুলনা মহানগর সিপিবি নেতা মিজানুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের ফুলতলা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক অলিয়ার রহমান অন্তত ১৫ জনকে আটক করে খানজাহান আলী থানায় নিয়ে যায়। রাত ১১টার দিকে কুদরত-ই-খুদাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
বন্ধঘোষিত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল পুনরায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু, শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধসহ ১৪ দফা দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে সংগঠনটি। এর আগে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও, স্মারকলিপি পেশ, সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সর্বশেষ শ্রমিকদের নিয়ে খুলনা-যশোর মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে গিয়েছিলেন সংগঠনটির নেতারা।
গতকাল রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালনের সময় ‘ফেম’ নামের একটি যাত্রীবাহী চলন্ত বাসের বাম পাশের সামনের গ্লাস পাথর মেরে ভাঙচুর করা হয়। শ্রমিকেরা বিভিন্ন দিক হতে খুলনা-যশোর মহাসড়কে চলমান যানবাহন ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ও রেললাইনের পাথর মারতে থাকেন। এ সময় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ৯ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জানমাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে পুলিশ ৭ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ২টি শটগানের গুলি ছুড়ে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক কুদরত-ই-খুদা প্রথম আলোকে বলেন, আজ বেলা সোয়া ৩টা পর্যন্ত তাঁদের আদালতে তোলা হয়নি। নেতা-কর্মীদের জামিনের আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। আদালতে তোলার পর জামিনের আবেদন করা হবে।