কৃত্রিম পা কেনার জন্য সহায়তা পেলেন প্রতিবন্ধী রিনা
ঝালকাঠি রাজাপুরের সেই বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী রিনা আক্তারকে (২০) কৃত্রিম পা কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন ঢাকার এক ব্যবসায়ী। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে ঢাকার ওই ব্যবসায়ীর পাঠানো ২৫ হাজার টাকা তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রিনাদের বাড়ি রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের পুটিয়াখালী গ্রামে। রিনা জন্ম থেকেই কথা বলতে ও শুনতে পারেন না। এই কারণে ছোটবেলায় রেললাইনে বসে খেলার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে ডান হাত ও পা হারান তিনি। ১০ বছর বয়সে বাবা মোজাম্মেল হককে হারান রিনা। ২০১০ সালে মারা যান তাঁর বাবা। তাঁর বাবা খুলনা জুট মিলে নিরাপত্তাপ্রহরীর চাকরি করতেন।
বাবা মারা যাওয়ার পর ২০১১ সালে রিনা ও তাঁর বোন শিরিনকে নিয়ে খুলনা থেকে রাজাপুরের পুটিয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন তাঁদের মা জয়নব বিবি। সেখানে একটি ছোট্ট ঘরে বাস করছেন তাঁরা। মায়ের ভিক্ষা ও প্রতিবেশীদের সাহায্যে চলত তাঁদের সংসার। এক বছরের মাথায় তাঁর মা জয়নব বিবিও মারা যান। এতিম হয়ে যান দুই বোন। ঝড়–বৃষ্টি এলেই পানিতে ভরে যেত তাঁদের ঘর।
বছর দেড়েক আগে স্থানীয় কলেজছাত্র মেহেদি হাসান প্রতিবন্ধী রিনা আক্তারের এ দুর্দশা দেখে তাঁদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেন। পুটিয়াখালী ভলান্টিয়ার্স নামে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ শাহাদাতকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের ঘরটি মেরামত করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবীরা মিলে নিজেদের অর্থ ও শ্রম দিয়ে রিনার জন্য একটি তহবিল গঠন করেন। সেই তহবিলের অর্থে রিনা একটি কৃত্রিম পা পান। দেড় বছর ব্যবহার করার পর তাঁর সেই কৃত্রিম পা নষ্ট হয়ে গেছে। কৃত্রিম পা নষ্ট হওয়ায় হাঁটতে গেলেই প্রচণ্ড ব্যথা হয় তাঁর।
এ নিয়ে ১ অক্টোবর প্রথম আলোর অনলাইনে সংস্করণে ‘একটি কৃত্রিম পায়ের জন্য প্রতিবন্ধী রিনার আকুতি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি দেখে প্রথম আলোর ঝালকাঠি প্রতিনিধির কাছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার এক ব্যবসায়ী রিনার জন্য ২৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন।
প্রথম আলোর ঝালকাঠির প্রতিনিধি মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের পুটিয়াখালী গ্রামের রিনাদের বাড়িতে গিয়ে তাঁর হাতে ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় পুটিয়াখালী ভলান্টিয়ার্সের সভাপতি সৈয়দ শাহাদাত, রিনার শুভাকাঙ্ক্ষী কলেজছাত্র মেহেদী হাসান প্রমুখ।
আমরা ঢাকার শ্যামলীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রিনার কৃত্রিম পায়ের বিষয়ে যোগাযোগ করেছি। ঢাকার ব্যবসায়ীর দেওয়া এই ২৫ হাজার টাকা দিয়ে সেখান থেকে রিনার কৃত্রিম পা সংযোজন করে আনব।
রিনার শুভাকাঙ্ক্ষী কলেজছাত্র মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা ঢাকার শ্যামলীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রিনার কৃত্রিম পায়ের বিষয়ে যোগাযোগ করেছি। ঢাকার ব্যবসায়ীর দেওয়া এই ২৫ হাজার টাকা দিয়ে সেখান থেকে রিনার কৃত্রিম পাটি সংযোজন করে আনব। শিগগিরই আমরা রিনাকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে কৃত্রিম পা লাগিয়ে নিয়ে আসব।’
পুটিয়াখালী ভলান্টিয়ার্সের সভাপতি সৈয়দ শাহাদাত বলেন, ‘রিনার কষ্টের কথা তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ ও তাঁকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রথম আলো ও সেই ব্যবসায়ীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’