কষ্টের জীবনে সাফল্যের ঝিলিক

চরম দারিদ্র্য সঙ্গে করে পড়াশোনা চালিয়ে সাফল্য ছিনিয়ে আনা চার অদম্য মেধাবীর জীবনের গল্প নিয়ে আজকের আয়োজন।

আর দশটা ছেলেমেয়ের মতো স্বাভাবিক নিয়মে পড়াটা এগোয়নি ওদের। দারিদ্র্যের জাঁতাকলে পড়ে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম চালিয়ে গেছে। কেউ কেউ দিনমজুরি পর্যন্ত করেছে। কিন্তু পড়া ছাড়েনি। চরম প্রতিকূলতার মুখে কঠোর পরিশ্রম করে ছিনিয়ে এনেছে সাফল্য। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে জিপিএ–৫। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উঠে আসা সেই অদম্য মেধাবীদের জীবনের গল্পই বলব আজ।

হাসান সরদার,জামিলউদ্দীন, সুমাইয়া আক্তার ও আবু ইউসুফ

পড়া নিয়ে শঙ্কায় হাসান

এসএসসির ফল জানতে সহপাঠীরা যখন স্কুলে ছুটছে, মিষ্টি বিলাচ্ছে, হাসান সরদার তখন পানের বরজে কাজ করছিল। দুপুরে সহপাঠীদের কাছ থেকে নিজের সাফল্যের খবর জানতে পারে। খুশিতে চোখে পানি চলে আসে হাসানের। বাবাকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু পরক্ষণেই শঙ্কা এসে ভর করে। স্কুলের গণ্ডি তো পাড়ি দেওয়া গেল, এবার কলেজের পড়া এগোবে কী করে!

হাসানের বাবা আক্কেল আলী সরদারের (৬৪) কোনো জমিজমা নেই, পেশায় ভ্যানচালক। মা পারভিন বেগমও শ্রমজীবি। অভাবের সংসারে তিন মেয়ে এক ছেলের মধ্যে হাসান সরদার ছোট। সে এবার বরিশালের গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী ঈশ্বরচন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

দিনমজুরিও করেছে জামিল

এসএসসির ফরম পূরণ করতে ২ হাজার ২০০ টাকা লাগবে। পাড়ার ছেলেদের পড়িয়ে দেড় হাজার টাকা জোগাড় হয়েছিল। বাকিটা বোন দিয়েছিলেন মুরগি বেচে। স্কুলে মধ্যাহ্ন বিরতির সময় বাড়িতে গেলে খাবার মিলবে না। তাই স্কুলেই নলকূপের পানি খেয়ে দুপুরটা পার করে দিত জামিল। পড়ার পাশাপাশি দিনমজুরিও করতে হয়েছে তাকে। এই করে জামিলউদ্দীন এবার ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার নাকাটিহাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ–৫ পেয়েছে। তার বাবা মজিবর রহমান বর্গাচাষি। ঘরে জামিলের দুই বোন। তাঁরা কলেজে পড়েন।

ভালো কলেজে পড়তে চায় সুমাইয়া

ব্র্যাক পরিচালিত স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। এবার এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পেয়েছে জিপিএ–৫। সুমাইয়া আক্তারের এমন সাফল্যে পরিবার তো বটেই, খুশি তার প্রতিবেশীরাও। কারণ, সুমাইয়া ময়মনসিংহের নান্দাইল উপেজলার রাজগাতী গ্রাম থেকে জিপিএ–৫ পাওয়া একমাত্র ছাত্রী। সে রাজগাতী ইউনিয়নের কাশীনগর উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ত। তার বাবা কবীর মিয়া বর্গাচাষি। কবীর মিয়া বলেন, চারজনের সংসার চালানোই তাঁর জন্য কঠিন। ছেলেমেয়েকে পড়াবেন কীভাবে! বাধ্য হয়ে ছেলেকে মাদ্রাসায় পড়তে দিয়েছেন। আর মেয়ে শহরে ভালো কলেজে পড়তে চায়। কিন্তু সেখানে তাকে পড়ানোর সামর্থ্য তাঁর নেই।

জল-জালের বাধা পেরিয়ে ইউসুফ

ঘর বানানোর জায়গা নেই। ছোট্ট একটি নৌকায় তার জন্ম। উপকূলীয় সাগর মোহনার নদ–নদী ও খালের পানিতে ভাসা নৌকায় তার বসবাস। তাদের কেউ বলে ভাসমান জেলে, কেউ বলে মানতা সম্প্রদায়ের মানুষ। পড়ার সুযোগ–সুবিধা তো দূরে থাক, সেই পরিবেশই নেই। তবু পড়াশোনায় অটল পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আবু ইউসুফ ওরফে অভি। এবার সে কর্পূরকাঠী ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ–৫ পেয়েছে।