কথা দিয়ে কথা না রাখায় ভাই কাদেরের ওপর চটেছেন কাদের মির্জা
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র আবদুল কাদের মির্জার নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যোগদানের কথা ছিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের। কিন্তু তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। এ কারণে তাঁর প্রতি তীব্র ক্ষোভ ঝেড়েছেন তাঁর ছোট ভাই ও নবনির্বাচিত মেয়র। তিনি বলেছেন, ‘ভার্চ্যুয়াল প্রোগ্রাম দিয়ে যাঁরা আসেননি, তাঁরা অপরাজনীতির কাছে মাথা নত করেছেন। অপরাজনীতির কাছে আত্মসমর্পণকে ঘৃণা করি।’
গতকাল বুধবার বিকেলে কোম্পানীগঞ্জের সরকারি মুজিব কলেজ মাঠে এই নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল ওবায়দুল কাদেরকে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন। অনুষ্ঠানে কাদের মির্জা বলেন, ‘আমার প্রয়োজন নেই কোনো ক্ষমতার। দল থেকে বহিষ্কার করবেন? করে দেন। আমরা বঙ্গবন্ধুর কথা বলব, শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা বলব। স্বাধীনতার কথা বলব। অন্যায়, অত্যাচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলব।’
সেতুমন্ত্রীর ভাই বলেন, ‘আজকে কষ্ট লাগে, দুঃখ লাগে। আমি অপরাজনীতি, টেন্ডারবাজির, চাকরি–বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমি প্রশাসনের ওপর প্রভাব খাটিয়ে অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমি অস্ত্রবাজির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমি কথা বলেছি ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে। আমি বলেছি, আমার ভোট আমি দেব, যাঁকে ইচ্ছা তাঁকে দেব। এই কথাগুলো বলে আজকে আমি অপরাধী। অপরাধী হিসেবে আজকে কেউ কেউ মনে করে।’
আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘আমরা রাজাকার পরিবার? ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি কীভাবে সারেন্ডার করলেন? কীভাবে নিজের আত্মসম্মানকে বিকিয়ে দিলেন? আমি দেব না। এখন যদি এই কথাগুলো বলি, বলবে সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত।’ তিনি বলেন, ‘আমি অপরাধ করতে পারি। আমার কথায় হয়তোবা কেউ কেউ বিব্রত হতে পারেন। কিন্তু কী অপরাধ করেছে আমার ভোটাররা? যে ভোটারদের অনেক কষ্ট করে আমি কেন্দ্রে এনেছিলাম। এ দেশের ভোটাররা আজ ভোট দিতে আসে না। ৫ শতাংশ ভোটও বিগত নির্বাচনগুলোতে কালেকশন হয়নি। আমি সেই ভোটবিমুখ ভোটারদের কেন্দ্রে আনার জন্য অনেক কথা বলেছি।’
ওবায়দুল কাদের দায়সারা অভিনন্দন জানিয়েছেন উল্লেখ করে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘আমাদের নেতা (ওবায়দুল কাদের) দায়সারা গোছের অভিনন্দন জানিয়েছেন আমাকে। ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আমার দল থেকে আমাকে, আমার ভোটারদের অভিনন্দন জানালেন না। কী অপরাধ ছিল আমার ভোটারদের? এত সুন্দর নির্বাচন তারা উপহার দিয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তারা ভোট দিয়েছে, কষ্ট করেছে। এর বিপরীতে একটু ধন্যবাদটুকু দিতে পারলেন না?’
ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে কাদের মির্জা বলেন, ‘মন্ত্রী, আপনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন। কোথায় সেই চাকরি? আমার ভাইবোনেরা চাকরি না পেয়ে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়াচ্ছে। তাই আমি বলব, ঘরে ঘরে না হলেও কোম্পানীগঞ্জে ৫০০ ও কবিরহাটে ৫০০ ছেলেমেয়ের চাকরি যদি না হয়, কোম্পানীগঞ্জের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। বলেছেন গ্যাস দেবেন। আমার এলাকার গ্যাস আমার এলাকার মানুষ পাবে না, এটা কি হয়? তিন মাসের মধ্যে আমাদের গ্যাস না দিলে এখান থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস আর যাবে না, বলে দিচ্ছি।’
প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বক্তৃতা করেন আবদুল কাদের মির্জা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘কার কাছে আমাদের আকুতির কথা বলব। মন্ত্রীর কাছে বললে অসুস্থ। অসুস্থ হলে অপরাজনীতির কাছে কীভাবে আত্মসমর্পন করলেন? তাদের কীভাবে আজকে পুনর্বাসন করার ষড়যন্ত্র করছেন? জানতে চায় কোম্পানীগঞ্জের মানুষ।’ তিনি বলেন, ‘ভোট (জাতীয় নির্বাচন) আমরা করেছি। তিন মাস কষ্ট করেছি। আপনি বক্তৃতা দিয়েছেন। মানুষ এখন পিঁপড়ার মতো চাকরির জন্য, গ্যাসের জন্য আমাদের কাছে আসে। আপনার কাছে যায় না, যাওয়ার সুযোগ নাই।’