কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কাজী এম আনিছুল ইসলামকে এক সিন্ডিকেটে পদোন্নতি দিয়ে পরের সিন্ডিকেটে তা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৯তম সিন্ডিকেট সভায় তাঁকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। চার মাস পর গত ২৭ জুন ৮০তম সিন্ডিকেট সভায় ওই পদোন্নতি স্থগিত করা হয়। আবার সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়েরি এবং ওয়েবসাইটে তাঁর পদ প্রভাষক উল্লেখ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭৯তম সিন্ডিকেট সভার পর গত ১ মার্চ কাজী এম আনিছুল ইসলাম সহকারী অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। তখন থেকে তিনি সহকারী অধ্যাপকের স্কেলে বেতন-ভাতাদি পেয়ে আসছেন। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি পক্ষ আনিছুলের আগের কর্মস্থল স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা সনদ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জমা দেওয়া হয়নি বলে রেজিস্ট্রারের কাছে অভিযোগ তোলেন। এরপর গত রোববার সিন্ডিকেটের ৮০তম সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। সেখানে কাজী এম আনিছুল ইসলামের পদোন্নতি স্থগিত করা হয়।
কিন্তু ৮০তম সিন্ডিকেটের এক সপ্তাহ আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়েরি ও ওয়েবসাইটে কাজী এম আনিছুল ইসলামের পদবি পরিবর্তন করে প্রভাষক লেখা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেই পদ পরিবর্তন করে ডায়েরি প্রকাশ ও ওয়েবসাইটের তথ্য পরিবর্তনে ৭৯তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন হয়েছে দাবি করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের শিক্ষকেরা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই ওই শিক্ষকের সঙ্গে এমনটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
অভিজ্ঞতা সনদে লেখা আছে “টু হুম ইট মে কনসার্ন”। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলছেন, “টু রেজিস্ট্রার” কেন লেখা হয়নি। এটা তাঁদের আপত্তির জায়গা।
জানতে চাইলে ডায়েরি মুদ্রণ কমিটির সদস্য ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার কাছে ডায়েরি ছাপার আগে সইয়ের জন্য পাঠানো হয়। দেখতে পেলাম, কাজী এম আনিছুল ইসলামের পদবি প্রভাষক লেখা। আমি সংশ্লিষ্টদের বললাম, তিনি তো সহকারী অধ্যাপক। এটা লেখা কেন? তখন কমিটির একজন আমাকে বললেন, ডায়েরির প্রকাশক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আবু তাহের এভাবেই পাঠিয়েছেন। এরপর আমি আর এতে সই করিনি। এক সপ্তাহ আগে ডায়েরি প্রকাশিত হয়। এরপর দেখলাম, কাজী এম আনিছুল ইসলামের নামের পাশে পদবিতে সহকারী অধ্যাপকের স্থলে প্রভাষক লেখা। এটা ৭৯তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন। আনিছুল বঙ্গবন্ধু পরিষদের শিক্ষকনেতা, ওই আক্রোশ থেকেই এসব করা হয়েছে।’
কাজী আনিছুলের আবেদনে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি ছিল। এটা ঠিক করার জন্য সিন্ডিকেট বলেছে। তিনি স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে শিক্ষকতা করেছেন, এটা সত্যি। তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আবু তাহের বলেন, আনিছুলের পদোন্নতির বিষয়টি যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। তাই তাঁর পদোন্নতি স্থগিত করা হয়েছে। ডায়েরি ও ওয়েবসাইটে এক সপ্তাহ আগে পদবি পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ডায়েরির বিষয়টি মুদ্রণ কমিটির আহ্বায়ক মো. শামীমুল ইসলাম বলতে পারবেন। ওয়েবসাইটের বিষয়টি আমি বলতে পারব না। কেবল প্রকাশক হিসেবে রেজিস্ট্রারের নাম ছাপা হচ্ছে।’
মুদ্রণ কমিটির আহ্বায়ক অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শামীমুল ইসলাম বলেন, ‘রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, আমরা সেই মোতাবেক ডায়েরি মুদ্রণ করেছি। কাজী আনিছুলের পদবি আপডেটের কোনো নথি আমাদের দেওয়া হয়নি।’
কাজী এম আনিছুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আগে আমি ঢাকার স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে শিক্ষকতা করেছি। এখানে যোগদানের সময় ওই অভিজ্ঞতা সনদ দিয়েছি। কিন্তু অভিজ্ঞতা সনদে লেখা আছে “টু হুম ইট মে কনসার্ন”। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলছেন, “টু রেজিস্ট্রার” কেন লেখা হয়নি। এটা তাঁদের আপত্তির জায়গা। আমার প্রশ্ন হলো, রেজিস্ট্রার দপ্তর সবকিছু দেখেই সিন্ডিকেটে উত্থাপন করল। পদোন্নতির চিঠি দিল। যোগদানপত্র গ্রহণ করল। বেতন-ভাতাদিও দিচ্ছে। সম্প্রতি পাসপোর্ট করার সময় সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দিয়েছে। তাহলে এখন কেন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে?’
জানতে চাইলে উপাচার্য এমরান কবির চৌধুরী বলেন, কাজী আনিছুলের আবেদনে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি ছিল। এটা ঠিক করার জন্য সিন্ডিকেট বলেছে। তিনি স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে শিক্ষকতা করেছেন, এটা সত্যি। তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। ডায়েরি ও ওয়েবসাইটে আগেই প্রভাষক লেখা হলো কেন জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, এগুলো অনেক সময় ভুলে সংশোধন করা হয় না।
প্রসঙ্গত, একই সিন্ডিকেট সভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক শিক্ষক মো. মাহাবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনিও বঙ্গবন্ধু পরিষদ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়মের তথ্য গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এর প্রমাণ চেয়েছেন।