ঈশ্বরগঞ্জে দুই শিশুকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন মামা: পুলিশ

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে দুই শিশুর গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মো. মাহবুব মিয়া (১৯) নামের এক তরুণকে আটক করেছে পুলিশ। তিনি সম্পর্কে ওই শিশুদের মামা। পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে মাহবুব দুই ভাগনিকে গলা কেটে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। আজ সোমবার বেলা একটার দিকে উপজেলার কাজীর বলসা গ্রামের ছালাম মুন্সির বাড়ি থেকে ওই দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদের মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ওই দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুদের মামা মাহবুব মিয়াকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি দুই ভাগনিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

নিহত দুই শিশুর নাম সায়মা (৬) ও তৃপ্তি (৫)। সায়মা নেত্রকোনার ব্যবসায়ী রাজীব মিয়ার মেয়ে। অন্যদিকে তৃপ্তি নান্দাইল উপজেলার কাদিরপুর গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে। শিশু দুটি পরস্পরের খালাতো বোন।

ওই বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আদরের সন্তানের গলাকাটা লাশ দেখে দুই শিশুর মা সালমা ও তাঁর বোন হালিমা বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। হালিমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোনো কথা না বলে এ প্রতিবেদকের দিকে নির্বাক তাকিয়ে ছিলেন। এক সপ্তাহ আগে দুই বোন সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।

ঈশ্বরগঞ্জের কাজীর বলসা গ্রামে দুই শিশুর হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে আশপাশের গ্রাম থেকে লােকজন ছুঁটে আসেন। আজ সােমবার ওই বাড়িতে
ছবি: প্রথম আলো

যে বাড়িতে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের কাজীর বলসা গ্রামের ছালাম মুন্সির বাড়ি বলে পরিচিত। মাহবুব ছালাম মুন্সির একমাত্র ছেলে। সায়মা ও হালিমা তাঁর দুই বোন। ছালাম মুন্সির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্যকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাহবুবই ওই বাড়ির একমাত্র পুরুষ সদস্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুই শিশুকে পৃথক দুটি ঘরের ভেতরে গলা কেটে হত্যা করা হয়। মো. রমজান মিয়া নামের এক প্রতিবেশী বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি খবর পান, ছালাম মুন্সির বাড়িতে আগুন লেগেছে। তিনি দ্রুত প্রথমে নিজের বাড়ির মেইন সুইচ বন্ধ করেন। পরে ছালাম মুন্সির বাড়িতে গিয়ে শিশুহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে চিৎকার–চেঁচামেচি শুনতে পান।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত মাহবুব পাশের নারায়ণপুর গ্রামের দারুল উলুম হামিউস সুন্নাহ রহমতপুর মাদ্রাসার হেফজ বিভাগে পড়তেন। তবে ওই প্রতিষ্ঠানে তিনি অনিয়মিত ছিলেন। আজ বেলা ১১টার দিকে তৌহিদ মিয়া (১৫) নামের ওই মাদ্রাসার এক ছাত্রকে কোদাল দিয়ে ঘাড়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করেন মাহবুব। তৌহিদকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে বাড়িতে ফিরে দুই ভাগনিকে হত্যা করেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

আরও পড়ুন

দুই নাতনিকে হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবের মা মোছা. শাহনাজ বেগম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তাঁর ছেলের মাথা ভালো নয়, তাঁর চিকিৎসা চলছে বলে জানান তিনি। ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. আবদুল কাদের মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মাহবুব হত্যার কথা স্বীকার করলেও কারণ সম্পর্কে কিছু বলেননি। এ ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।