বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায় অনুযায়ী দণ্ডিত আসামিদের আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করতে হবে। আদালতের একটি সূত্র জানায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের জন্য রায়সহ মামলার যাবতীয় নথিপত্র আগামী রোববার উচ্চ আদালতে পৌঁছাতে পারে।
কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত।
অন্যদিকে দণ্ডিত আসামিরা বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল ও আপিল করতে পারবেন।
ডেথ রেফারেন্স শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপার বুক (মামলার বৃত্তান্ত) প্রস্তুত করতে হয়। ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদন) ও সংক্ষুব্ধ পক্ষের আপিলের ওপর হাইকোর্টে একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।
এদিকে এ মামলার নথি ডেথ রেফারেন্সের জন্য উচ্চ আদালতে পাঠানো হয়েছে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা গোলাম সরোয়ার আজ শুক্রবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিরাপত্তার কারণে বিষয়টি সম্পর্কে কিছু বলতে চাচ্ছি না।’
আইনজীবীরা জানান, ডেথ রেফারেন্স এমন একটি প্রক্রিয়া, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নিজ থেকে আপিল না করলেও আইনের বিধান অনুসারে ডেথ রেফারেন্সের ওপর উচ্চ আদালতে শুনানি ও নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। বিচারিক আদালতের রায় পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে উচ্চ আদালত রায় বহাল, পরিবর্তন, সংশোধন, পরিমার্জন বা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে তাঁর স্ত্রী আয়শার সামনে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে সন্ত্রাসীরা। এরপর তাঁকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেদিন বিকেলে তিনি মারা যান। পরদিন ২৭ জুন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন।
এ মামলায় প্রধান সাক্ষী করা হয় আয়শাকে। পরে অভিযোগপত্রে তাঁরসহ ২৪ জনের নাম আসে। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিচারকার্য চলছে বরগুনার শিশু আদালতে। বাকি ১০ আসামির (প্রাপ্তবয়স্ক) বিরুদ্ধে গত ১ জানুয়ারি অভিযোগ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। ৮ জানুয়ারি থেকে এই ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ৭৬ জন সাক্ষ্য দেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এ মামলায় আয়শা সিদ্দিকা ওরফে মিন্নিসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য পাঁচ আসামি হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয় (২২) ও মো. হাসান (১৯)। আর খালাস পাওয়া চারজনের মধ্যে পলাতক মুসা ছাড়া বাকি তিনজনকে রাতেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শিশু আদালতে চলমান ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামির বিচারপ্রক্রিয়ায় সাক্ষ্য নেওয়া শেষ। ৫ অক্টোবর থেকে যুক্তিতর্ক শুরুর দিন ধার্য রয়েছে।