যে সড়কে চলতে চলতে দেখা মিলবে পাহাড় আর মেঘের ভেলা
সড়কের দুই পাশে সবুজ পাহাড়। আঁকাবাঁকা সড়কটি ধরে যেতে যেতে দেখা যায় উঁচু পাহাড়ের ওপর ভাসছে শিমুল তুলার মতো ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ। নীল আকাশে ভাসমান এসব সাদা মেঘ মন জুড়ায় যে কারও। দৃষ্টিনন্দন এই সড়কের নাম মহালছড়ি-সিন্দুকছড়ি সড়ক। তবে কেবল সিন্দুকছড়ি সড়ক নামেই চেনে বেশির ভাগ মানুষ। মেঘ পাহাড়ের মিতালি দেখতে খাগড়াছড়ি জেলার এই সড়ক এখন হয়ে উঠেছে পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য।
গুইমারা উপজেলার জালিয়াপাড়া সিন্দুকছড়ি হয়ে সড়কটি শেষ হয়েছে মহালছড়িতে। সিন্দুকছড়ি ভ্রমণে আঁকাবাঁকা সড়কের সৌন্দর্য উপভোগ করা শুরু করবেন জালিয়াপাড়া বাজারের পর থেকেই। পাহাড়ি রাস্তার প্রতিটি বাঁকে রোমাঞ্চকর অনুভূতি জাগবে। যেমন রাস্তা, তেমনি চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ।
সড়কটি বেশি জনপ্রিয় বাইকারদের কাছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এই সড়কে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন বাইকাররা। মসৃণ পিচঢালাই করা সড়ক অথচ আঁকাবাঁকা, তাই বাইকারদের অনেকেই সড়কটিতে কর্নারিং করতে পছন্দ করেন। তবে পারদর্শী না হলে সড়কটিতে মোটরসাইকেল নিয়ে কর্নারিং না করাই ভালো; কারণ, একটু এদিক-সেদিক হলেই সোজা খাদে গিয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
সাড়ে ১৫ কিলোমিটার সড়কটির পাশে রয়েছে ছোট ছোট মাচাং ঘর। পাহাড়ের ওপর মন্দির-বিহার। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে সড়কের পাশে বসে পাহাড়ি নারীরা পিঠা বিক্রি করেন। তাঁদের কাছ থেকে পিঠা ছাড়াও পাওয়া যায় জুমে লাগানো টাটকা শাকসবজি ও ফলফলারি। সিন্দুকছড়ি সড়কের পাশেই রয়েছে ধুমনিঘাট ঝরনা। অনেক সময় ধুমনিঘাটের পাশের এলাকায় বন্য হাতির পাল দেখা যায়। তবে বর্ষাকালই হচ্ছে এই ঝরনা দেখার মোক্ষম সময়।
পাহাড়কে অক্ষত রেখে মহালছড়ি-সিন্দুকছড়ি সড়ক নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২১ সালে। সম্প্রতি সড়কটিতে গিয়ে দেখা যায়, আঁকাবাঁকা সড়কটিতে কিছুক্ষণ পরপর ছুটে চলছে পর্যটকবাহী যানবাহন। পর্যটকেরা সড়কের বিভিন্ন স্থানে নেমে ছবি তুলছেন। সড়কের পাশের দোকানগুলোতেও দেখা যায় পর্যটকের ভিড়। সিন্দুকছড়ি সড়কের পঙ্খীমুড়া এলাকার চায়ের দোকান রয়েছে কল্যাণ ত্রিপুরার। তিনি বলেন, ‘একসময় আমি জুমে কাজ করতাম। তিন বছর আগে চায়ের দোকান দিয়েছি। প্রথম অবস্থায় তেমন বিক্রি হতো না। এখন পর্যটক আসায় মোটামুটি বিক্রি হয়। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে এই সড়ক দেখতে কয়েক শ লোক আসেন।’
একই স্থানে কথা হয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান ও রিয়াজুলের সঙ্গে। বন্ধুদের নিয়ে তাঁরা খাগড়াছড়িতে বেড়াতে এসেছেন। তাঁরা জানান, খাগড়াছড়ি ঘুরতে এসে তাঁরা এই সড়কের সৌন্দর্যের কথা জেনেছেন। আঁকাবাঁকা সড়ক, সড়কের দুই পাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ, মাচাং ঘর দেখে খুবই মুগ্ধ তাঁরা। আগামী বর্ষায় আবার সড়কটি দেখতে আসবেন।
সড়কের পাশে রয়েছে হ্লাচিংমং মারমা নামে এক বাসিন্দার বিশাল ফলের বাগান। তিনি বলেন, পর্যটকদের কারণে তাঁর বাগানের ফল বাগানেই বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকায় ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে এই সড়ক।
সিন্দুকছড়ি যাওয়ার উপায়
ঢাকার কলাবাগান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, আবদুল্লাহপুর অথবা গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে শ্যামলী, হানিফ, সেন্ট মার্টিন, শান্তি পরিবহনসহ খাগড়াছড়িগামী অনেক বাস পেয়ে যাবেন। নন-এসি, এসি বাসে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা। গুইমারা উপজেলায় জালিয়াপাড়া মোড়ে নেমে যাবেন। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে সিন্দুকছড়ি সড়ক ভ্রমণ করা যায়। অটোরিকশা ভাড়া পাওয়া যায় ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যে। খাগড়াছড়ি সদর থেকে যাঁরা সড়কটি ঘুরতে যাবেন, তাঁদের ব্যক্তিগত গাড়ি, বাইক না থাকলে শহর থেকে জিপ ভাড়া করা ভালো। না হলে অযথা বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়। সিন্দুকছড়ি অত্যন্ত দুর্গম এলাকা হওয়ায় একা না গিয়ে দল বেঁধে ভ্রমণ করা উচিত।
থাকা-খাওয়া
মহালছড়ি কিংবা গুইমারা উপজেলায় থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। থাকতে হলে আপনাকে যেতে হবে জেলা শহর খাগড়াছড়িতে। শহরে পর্যটন মোটেলসহ বিভিন্ন মানের থাকার হোটেল আছে। খাওয়া-দাওয়ার জন্য মহালছড়ির ২৪ মাইল ও জালিয়াপাড়া এলাকায় বেশ কিছু রেস্তোরাঁ রয়েছে। তবে খাগড়াছড়ি শহরে পানখাইয়াপাড়া, মহাজনপাড়া এলাকার কিছু রেস্তোরাঁয় গিয়ে নেওয়া যাবে পাহাড়ি খাবারের স্বাদ।