উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশে মানুষের উপস্থিতি নিয়ে নানা আলোচনা
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় অনুষ্ঠিত উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশে উপস্থিতি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। গতকাল রোববার দুপুরে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে হাট ও ঘাট থেকে ইজারা প্রথা বাতিল, নদীভাঙন রোধ, কৃষকের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণসহ ১২ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। তবে ঘুরে-ফিরে কৃষকদের উপস্থিতির সংখ্যা কম নিয়ে বেশি কথা চাউর হচ্ছে।
কৃষক মহাসমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারের দুজন উপদেষ্টা উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাঁরা আসেননি। তাঁরা কেন এলেন না, এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। যেখানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতি প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেখানে ৫০০ জনের কম মানুষের উপস্থিতি নিয়ে হতাশ হয়েছেন অনেকে।
কৃষক মহাসমাবেশের আয়োজকদের ভাষ্য, ইজারাদার ও প্রভাবশালী মহলের চক্রান্তে প্রত্যাশিত মানুষের উপস্থিতি হয়নি। তবে চিলমারী জোড়গাছ এলাকার কৃষক নেতা ও সংগঠক মাহমুদুল হাসান বলছেন, কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সময় নির্ধারণ না করায় এ মহাসমাবেশ ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ।
গতকাল অনুষ্ঠিত কৃষক মহাসমাবেশে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ নাছির উদ্দিন, লেখক, গবেষক ও সংগঠক রাখাল রাহা, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা কনক রহমান, চলচ্চিত্রকার খন্দকার সুমন ও ন্যাপ ভাসানী কুড়িগ্রামের সভাপতি সেলিম খান বক্তব্য দেন। এ ছাড়া মহাসমাবেশের মঞ্চে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ১৭ জন নেতা-কর্মী, কৃষক প্রতিনিধি ১ জন, মৎস্যজীবী প্রতিনিধি বক্তব্য দেন। মহাসমাবেশের মঞ্চের সামনে দর্শক আসনে কৃষকদের জন্য মাটিতে ত্রিপল বিছানো হয়েছিল। সেখানে ৫০০ জনেরও কম কৃষককে বসে থাকতে দেখা যায়। পাশেই ছিল বিশেষ অতিথি ও সাংবাদিকদের জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা। সেখানে কিছু সাংবাদিক ও অতিথিকে বসে থাকতে দেখা যায়।
স্থানীয় লোকজন জানান, উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশের জন্য আয়োজকদের পক্ষ থেকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হয়েছিল সাড়ে ৬৫ লাখ টাকা সরকারি বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে। সেই চিঠি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন মহলে কৃষক মহাসমাবেশ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। আর এ কারণে হয়তো মহাসমাবেশে কৃষকের উপস্থিতি ছিল হতাশাব্যঞ্জক।
চিঠিতে কৃষক মহাসমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি প্রত্যাশা করে ৩০ হাজার কৃষক-জেলের এক বেলা খাবারের জন্য জনপ্রতি ২০০ টাকা করে ৬০ লাখ টাকা, ১০০ জন ভিআইপি অতিথিদের খাবারের জন্য জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে ৫০ হাজার টাকা এবং স্টেজ, সাউন্ড সিস্টেম, গেট, লাইটিং, বসার ব্যবস্থা, তোরণ ও অন্যান্য বাবদ ৫ লাখসহ মোট সাড়ে ৬৫ লাখ বরাদ্দ চাওয়া হয়। মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ হাসান (নলেজ) স্বাক্ষরিত এ চিঠি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিতর্ক তৈরি হয়।
এমডি রাহিমুল ইসলাম নামের একজন তাঁর ফেসবুকে কৃষক মহাসমাবেশের ছবিসহ পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এত এত মানুষ কুড়িগ্রাম আগে কখনো দেখে নাই। উপস্থিতি ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ প্রত্যাশা করা হলেও উপস্থিতির সংখ্যা খুবই নাজুক।’
জানতে চাইলে উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য নাহিদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আমরা কৃষকদের এক বেলা খাবারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের টাকা দেয়নি। উল্টো আমাদের আবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস করে দেয়। পরে হাট ও ঘাটের ইজারাদার, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও চরাঞ্চলের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সহজ–সরল কৃষকদের বোঝায় যে সরকার টাকা দিয়েছে। এ ঘটনায় বিভিন্ন চরাঞ্চলের কৃষকেরা আমাদের প্রোগ্রামে আসতে টাকা দাবি করেন। কৃষকদের হাতে হাতে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁরা কৃষক সমাবেশে আসা বন্ধ করে দেন।’
চিলমারীর মতো একটি ছোট উপজেলায় এত মানুষের সমাবেশ সম্ভব কি না—জানতে চাইলে নাহিদ হাসান বলেন, ‘এটি আমাদের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ইজারাদার ও প্রভাবশালী মহলের চক্রান্তে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।’
স্থানীয় কৃষক নেতা ও সংগঠক মাহমুদুল হাসান বলেন, চিলমারীর মতো জায়গায় ৩০ হাজার কৃষক নিয়ে সমাবেশের কল্পনা করা একটি অলীক স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়। আয়োজকেরা হয়তো জানেনই না, চিলমারীতে ঠিক কতজন কৃষক আছেন। জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকে কৃষক এই মহাসমাবেশে আসবেন, সেটির জন্য উপযুক্ত সময় এখন নয়। বর্তমানে ইরি ও বোরো ধান লাগানোর সময়। এ সময়ে সমাবেশ না করে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন পরে করলে আরও বেশি কৃষক সমাবেশে আসতেন। তবে সেই সংখ্যা ৩০ হাজার হতো না।