‘আমার স্বামী তো রাজনীতি করেন না, তাহলে কেন তাঁকে মারা হলো’
অফিস থেকে কল পেয়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ১৯ জুলাই (শুক্রবার) সকালে ঢাকার উত্তর বাড্ডার গুপীপাড়ার বাসা থেকে গুলশান-২–এ কর্মস্থলের দিকে রওনা হন আবদুল গণি (৪৫)। শাহজাদপুর বাঁশতলা এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে তাঁর মাথার ডান পাশে গুলি লেগে আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান।
নিহত আবদুল গণি রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকার আবদুল মজিদ শেখের ছেলে। তিনি গুলশান-২–এর সিক্সসিজন নামের আবাসিক হোটেলের কারিগরি বিভাগে কাজ করতেন। ২১ জুলাই বিকেলে তাঁর লাশ গ্রামের বাড়ি খানখানাপুর আনা হয়। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে স্থানীয় কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। আবদুল গণির স্ত্রী লাকি আক্তার, ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী আলামিন শেখ ও ছয় বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন।
আহাজারি করতে করতে লাকি আক্তার বলেন, শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে তাঁর স্বামী ফোন করে জানতে চান, বাড়ির সবাই নাশতা করেছে কি না। তিনি (আবদুল গণি) বললেন, ‘জরুরি ফোন পেয়ে অফিসে যাচ্ছি। ঢাকার পরিস্থিতি ভালো না। আমার জন্য দোয়া কোরো। জান্নাতকে দেখে রেখো।’ বলেই ফোন রেখে দেন।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কসংলগ্ন রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর মোস্তফার ইটভাটার ভেতর দিয়ে আবদুল গণির বাড়ির যাতায়াতের পথ। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আবদুল গণির লাশ দেখতে গত শনিবার বিকেলে তাঁর বাড়িতে স্বজন ও প্রতিবেশীরা ভিড় করেন।
লাকি আক্তার বলেন, ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে ঢাকা থেকে এক স্বজন ফোন করে জানান যে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবদুল গণি মারা গেছেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘আমার স্বামী তো রাজনীতি করেন না, তাহলে কেন তাঁকে মারা হলো? আমার দুই ছেলেমেয়েকে এখন কে দেখবে?’
ছেলে আলামিন শেখ বলেন, ‘কার কাছে বাবা হত্যার বিচার চাইব?’
আবদুল গণির বড় ভাই আবদুল রাজ্জাক শেখ বলেন, ‘আমার ভাই কোনো রাজনীতি করেনি। ওর দুটি সন্তান এতিম হয়েছে। পরিবার চলার মতো আয়ের কোনো পথ নেই। সরকারের কাছে দাবি, আবদুল গণির ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। অন্তত তাঁকে কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিলে পরিবারটি বেঁচে যেত।’