‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে গিয়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়’

বরিশালে বাসদের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা খালেকুৃজ্জামান। রোববার সন্ধ্যায় নগরের সদর রোডে কীর্তনখোলা মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার হাতবদল হলেও ব্যবস্থার বদল হয়নি, বরং শাপলা চত্বর আর শাহবাগের মতো অহেতুক বিতর্ক সামনে এনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে গিয়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় নেতারা।

রোববার সন্ধ্যায় বরিশালে ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ কোন পথে’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। নগরের কীর্তনখোলা মিলনায়তনে বাসদ বরিশাল জেলা কমিটি এই সভার আয়োজন করে। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাসদের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান বলেন, ‘শুধু ক্ষমতার হাতবদল হলে হবে না, ব্যবস্থার বদল না হলে সাধারণ মানুষের অবস্থার উন্নতি হবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে গিয়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।’

শাপলা চত্বর আর শাহবাগের মতো অহেতুক বিতর্ক সামনে এনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে, এমন অভিযোগ করে খালেকুজ্জামান আরও বলেন, ‘সরকার এ কাজে সহায়তা করছে। মুক্তিযুদ্ধকে বাতিল করার পরিকল্পনা হিসেবে সংবিধান থেকে চার মূলনীতি বাতিলের কথা আসছে, অথচ মুক্তিযুদ্ধের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশে গণমানুষের পক্ষে কোনো বয়ানই দাঁড় করানোর অপচেষ্টা জনগণ মেনে নেবে না।’

খালেকুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে লড়াকু বাম প্রগতিশীল শক্তিকে কেন্দ্রে রেখে গণমানুষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিকে আগুয়ান করার আহ্বান জানান। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সমন্বয়ক মনীষা চক্রবর্তী। এতে অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

সভায় অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সিপিবি বরিশাল জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, ব্রজমোহন কলেজের সহকারী অধ্যাপক রণজিৎ মল্লিক, সাংবাদিক সৈয়দ মেহেদী হাসান, আইনজীবী আবু আল রায়হান, পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী লিঙ্কন বায়েন। বক্তারা বলেন, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের ক্ষমতায় পরিবর্তন এলেও সাধারণ মানুষের জীবনে বৈষম্য কমানোর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য এবং মব–সন্ত্রাস বেড়েছে।

মতবিনিময় সভায় বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ জানান, সরকার ১০ বছরের মধ্যে দ্রব্যমূল্যের সর্বনিম্ন হার দাবি করলেও বাস্তবতা সম্পূর্ণ উল্টো। নতুন নামে পুরোনো চরিত্রের রাজনৈতিক দল গড়ে ব্যবসায়ীদের টাকায় ইফতার পার্টি করে বৈষম্য দূর করা যাবে না।

বজলুর রশিদ আরও বলেন, সেনাপ্রধান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে, তাই সবাইকে শান্তি বজায় রাখতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ থেকে বিরত থাকতে বলে মূলত গণতান্ত্রিক পরিবেশকে সংকুচিত করতে চেয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের মহাসচিবকে কম সংস্কার হলে এ বছর ডিসেম্বরে, বেশি সংস্কার করলে আগামী বছরের জুনে নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন। ক্ষমতায় থাকার জন্য তাঁরা নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চান, অথচ দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নাগালের বাইরে, আরেক দিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মব–সন্ত্রাসে নিমজ্জিত। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম সংস্কার করে অবিলম্বে নির্বাচন দেওয়া ছাড়া কোনো স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব নয়।

মনীষা চক্রবর্তী বলেন, শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিকেই শক্তিশালী করতে হবে। তবেই বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাম গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য জোরদার করতে তিনি আহ্বান জানান।