শেরপুর জেলা কারাগার ধ্বংসস্তূপে পরিণত, আসামি পালানোর ঘটনায় মামলা হয়নি

শেরপুরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার হামলা ও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা কারাগারের প্রধান ফটক। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পৌরসভার দমদমা কালিগঞ্জ এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

শেরপুর জেলা কারাগারে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনার পর কারাগার যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ছাত্র-জনতা কারাগারে থাকা অস্ত্র, মূল্যবান সামগ্রী ও টাকাপয়সা লুট করেন। এ সময় কারাগারে থাকা সব বন্দী পালিয়ে যান।

গতকাল সোমবার বিকেলে শেরপুর পৌরসভার দমদমা কালীগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত জেলা কারাগারে এই ঘটনা ঘটে।

আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় সরেজমিন দেখা যায়, কারাগারের সড়কসংলগ্ন ফটক ও ভেতরের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। কারাগারের ভেতরে যাতে কেউ প্রবেশ করতে বা কারাগারের আর কোনো সম্পদ যাতে কেউ বিনষ্ট করতে না পারেন, সে জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা দায়িত্ব পালন করছেন। ভেতরে কয়েকজন কারারক্ষী সাদাপোশাকে ঘুরছেন। অনেক চেষ্টা করেও কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করা যায়নি।
বাইরে থেকে কারাগারের প্রধান ফটক, কারারক্ষীদের ব্যারাক, কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক ও কারাধ্যক্ষের বাসভবন ও কার্যালয় ভাঙচুর এবং আগুনে পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন দেখা যায়।

স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত এক ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, কারাগারের অফিস, রান্নাঘর, বন্দীদের থাকার জায়গা, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের থাকার কনডেমড সেলসহ পুরো এলাকায় ভাঙচুর ও আগুনে পোড়ার দাগ রয়েছে। পুরো কারাগারে লন্ডভন্ড অবস্থা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সদর উপজেলার মো. তারিফ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বিকেলে কয়েক হাজার মানুষ কারাগারের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর প্রধান ফটকসহ কারাগারের অনেক স্থাপনা ভাঙচুর করে আগুন জ্বালিয়ে দেন। একপর্যায়ে কারাগারের ভেতর থেকে বন্দীরা বের হয়ে আসেন। অনেকেই কারাগার থেকে অস্ত্র ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে বের হয়ে আসেন। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা কারাগারে এসে অস্ত্র নিয়ে যাওয়া কয়েকজনকে নিবৃত্ত করেন। পরে সন্ধ্যার আগে লোকজন কারাগারে থেকে চলে যান।

আজ দুপুর ১২টার দিকে কারা ফটকের সামনে কথা হয় জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক হুমায়ুন কবির খানের সঙ্গে। হামলার ঘটনার বিবরণ দিয়ে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা, রামদা, দেশি অস্ত্র নিয়ে কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করেন। তাঁরা বন্দীদের ওয়ার্ড ভেঙে ফেলে ও তছনছ করে আগুন ধরিয়ে দেন। বিপুলসংখ্যক মানুষের হামলার মুখে কারারক্ষীরা অসহায় হয়ে পড়েন। এ সময় কারাগারে আটক ৫১৮ জন বন্দী পালিয়ে যান। হামলাকারী ব্যক্তিরা কারাগারের ৬১টি অস্ত্রের মধ্যে ৯টি অস্ত্র, চায়নিজ রাইফেলের ৮৬৪টি গুলি, শটগানের ৩৩৬টি গুলি ও কারাবন্দীদের মজুত করা খাদ্যসামগ্রীসহ টাকাপয়সা লুট করে নিয়ে যান। সেই সঙ্গে কারাগারের মূল্যবান রেকর্ডপত্র, গাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। সংবাদ পেয়ে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। তাদের সহায়তায় কয়েকটি অস্ত্র রক্ষা করা সম্ভব হয়।

কারা তত্ত্বাবধায়ক হুমায়ুন কবির আরও বলেন, পালিয়ে যাওয়া কারাবন্দীদের মধ্যে ১০ জন ছিলেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এবং ৭০ থেকে ৮০ জন ছিলেন বিভিন্ন মেয়াদের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি। আর অন্যরা ছিলেন সাধারণ আসামি। কারাগারে হামলার ঘটনায় এখনো কোনো মামলা করা হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।