নাঙ্গলকোটে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা, অভিযোগ বিএনপির আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় দলীয় কোন্দল ও বিরোধে সেলিম ভূঁইয়া (৪৫) নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার বাঙ্গড্ডা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। স্থানীয় বিএনপির একটি পক্ষের হামলায় অপর পক্ষের ওই স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
নিহত সেলিম ভূঁইয়া উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক। তিনি একই ইউনিয়নের দায়েমছাতি খিলপাড়া এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে নাঙ্গলকোটে বিএনপির রাজনীতিতে চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভূঁইয়ার সঙ্গে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার দলীয় কোন্দল ও বিরোধ চলে আসছে। আজকের ঘটনায় নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সেলিম ভূঁইয়া সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভূঁইয়ার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
আবদুল গফুর ভূঁইয়া আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেলিম ভূঁইয়া আমার একনিষ্ঠ কর্মী। খুবই ভালো সংগঠক। আজ দুপুরে উপজেলার রায়কোট দক্ষিণে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে আমি এবং আমার নেতা-কর্মীদের আমন্ত্রণ ছিল। বিকেলে আমার একটি মতবিনিময় সভা ছিল উপজেলার কাকৈরতলা এলাকায়। এ জন্য সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে সেলিমসহ অন্যান্য নেতা-কর্মী মোটরসাইকেলযোগে বাঙ্গড্ডা বাজার হয়ে কাকৈরতলার দিকে যাচ্ছিলেন। বাঙ্গড্ডা এলাকায় পৌঁছালে আগে থেকে দেশি অস্ত্রসহ অবস্থান নেওয়া মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার সমর্থিত সন্ত্রাসীরা আমার পাঁচ-ছয়জন নেতা-কর্মীর ওপর হামলা চালায়। তাঁদের লাঠি, হাতুড়িসহ বিভিন্ন দেশি অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে খবর পেয়ে আমাদের অন্যান্য নেতা-কর্মী ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে চিকিৎসক সেলিমকে মৃত ঘোষণা করেন।’
আবদুল গফুর ভূঁইয়ার দাবি, নাঙ্গলকোটের বিএনপির রাজনীতিতে ১ শতাংশ নেতা-কর্মীও মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার সঙ্গে নেই। ৫ আগস্টের পর তিনি যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডারদের নিজের সঙ্গে ভিড়িয়েছেন। এখন তাঁদের দিয়ে এসব ঘটনা করাচ্ছেন। ঘটনার সময় মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া ও নাঙ্গলকোট উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলামসহ অন্য নেতারা বাঙ্গড্ডায় ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তাঁদের এসব কথা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে পরে মন্তব্য করব।’
আজ বিকেল পাঁচটার দিকে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ বিকেলে বাঙ্গড্ডা স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বাঙ্গড্ডা ইউনিয়ন যুবদলের কর্মিসভার আয়োজন করা হয়। তারা যে সময়ের কথা বলছে, তখন আমি ও মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে ছিলাম। ওই সময় আমরা বাঙ্গড্ডাতেই ছিলাম না। আমরা এ ঘটনার বিষয়ে কিছু জানি না। দলীয় কোন্দলকে কেন্দ্র করে গফুর ভূঁইয়া মিথ্যাচার করছেন। বিকেল চারটায় আমরা এসে যুবদলের কর্মিসভায় যোগ দিয়েছি। মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া কর্মিসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন। কারা এ ঘটনা করেছে পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।’
স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাঙ্গড্ডা স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে মোবাশ্বের আলমের অনুসারী যুবদলের কর্মিসভা ছিল। সভাকে কেন্দ্র করে বাঙ্গড্ডা বাজার এলাকায় তাঁদের নেতা-কর্মীরা সংগঠিত ছিলেন। গফুর ভূঁইয়ার অনুসারীরা বাঙ্গড্ডা বাজার দিয়ে যাওয়ার সময় মোবাশ্বের আলমের পক্ষের কয়েকজন তাঁদের ওপর হামলা করেন। একপর্যায়ে দুই গ্রুপের নেতাদের মধ্যে মারামারি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সেলিমকে ব্যাপক পেটানো হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পরে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের মারামারিতে ওই স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যিনি মারা গেছেন তিনি গফুর ভূঁইয়া পক্ষের। মারামারি হয়েছে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। তবে ঘটনাস্থলে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া ছিলেন-এমন কোনো তথ্য পুলিশ পায়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তিনি আরও বলেন, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার সকালে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় থানায় এখনো মামলা হয়নি।