ইজতেমা মাঠ পূর্ণ, সড়ক-মহাসড়কে জুমার নামাজ পড়লেন মুসল্লিরা
ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১টা ৩০ মিনিট। টঙ্গীর তুরাগতীরের ইজতেমা মাঠ, সড়ক-মহাসড়কে লাখো মুসল্লির সমাগম। জুমার নামাজের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই ছোটাছুটি বাড়ছে মুসল্লিদের। কারও হাতে নামাজের বিছানা, কারও হাতে পাটি, কারও কাছে সংবাদপত্র।
বেলা ১টা ৪৬ মিনিটে মাইকে ভেসে এল নামাজের একামত। মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে গেল সব ছোটাছুটি। যে যেখানে ছিলেন, বিছানা পেতে দাঁড়িয়ে পড়লেন নামাজে। মুসল্লিদের সিজদায় মাথা নোয়ানোর মাধ্যমে পুরো এলাকায় নেমে এল পিনপতন নীরবতা।
আজ শুক্রবার দুপুরে টঙ্গীর তুরাগপাড়ের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে এভাবেই জুমার নামাজ আদায় করেন লাখো মুসল্লি।
ইজতেমার জামাতের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করতে আজ সকাল ছয়টা থেকেই দলে দলে ইজতেমা মাঠের দিকে আসতে থাকেন রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকার সাধারণ মুসল্লিরা। নামাজের প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে থেকেই মুসল্লিদের কেউ ইজতেমা ময়দানে, কেউ সড়কে, কেউবা বাড়ির ছাদে জায়গা করে নেন। এর আগে বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ইজতেমা।
জুমার নামাজ পড়ান কাকরাইল মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা জুবায়ের। তিনি দাঁড়ান তুরাগ নদের পশ্চিম পাড়ে আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে।
নামাজের সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের অংশগ্রহণে ভরে যায় ইজতেমা মাঠ। মানুষের ঢলে জায়গা না পেয়ে অনেকেই বসে পড়েন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, কামারপাড়া-মন্নুগেট সড়ক, আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া সড়ক, থেমে থাকা বাস, বাসাবাড়ির ছাদ ও আশপাশের অলিগলিতে। এতে কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, আবদুল্লাহপুর আশুলিয়া সড়ক ও কামারপাড়া-মন্নুগেট সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। প্রথম পর্বের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এ পর্ব। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা হবে ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি। এ পর্বের নেতৃত্ব দেবেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা।
ইজতেমায় অংশ নিতে গত মঙ্গলবার থেকেই তুরাগতীরের ইজতেমা মাঠে সমবেত হচ্ছেন মুসল্লিরা। এর মাঝে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ভরে ওঠে পুরো ইজতেমা মাঠ। সরেজমিন দেখা যায়, আজ সকাল থেকে জুমার নামাজে অংশ নিতে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকার মুসল্লিরা বিভিন্ন মাধ্যমে আসতে থাকেন ইজতেমা মাঠের দিকে। তাঁরা চেষ্টা করেন ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের। তবে নামাজ শুরুর অনেক আগেই মাঠ পূর্ণ হয়ে যায়। এর মধ্যেই মাইকে ঘোষণা আসে নামাজের। মুসল্লিরা ছোটাছুটি বন্ধ করে বসে পড়েন যে যাঁর জায়গায়।
নামাজ শেষে কামারপাড়া-মন্নুগেট সড়কে কথা হয় রাজধানীর তুরাগের টেকপাড়া থেকে আসা মো. বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে। তাঁরা চার বন্ধু এসেছেন জুমার নামাজে অংশ নিতে। প্রায় আধা ঘণ্টা চেষ্টা করেও তাঁরা মাঠে প্রবেশ করতে পারেননি। এর মধ্যেই নামাজের একামত হলে নামাজের বিছানা পেতে বসে পড়েন সড়কে। বেলায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারই প্রথমবারের মতো ইজতেমার নামাজে অংশ নিতে এসেছি। সাপ্তাহিক ছুটি থাকা সত্ত্বেও গ্রামের বাড়ি যাইনি শুধু ইজতেমার বড় জামাতে নামাজ পড়ব বলে। বড় জামাতে নামাজ পড়তে পেরে খুব ভালো লাগছে।’