চট্টগ্রামে মাধ্যমিকের বই এসেছে চাহিদার মাত্র ১ শতাংশ

মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আসা বই বিদ্যালয়ে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করছেন এক কর্মচারী। গতকাল বেলা একটায় চট্টগ্রাম নগরের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে মাধ্যমিকের গুদামেছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম নগরের কলেজিয়েট স্কুলের মাধ্যমিক শাখায় প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। আগামীকাল বুধবার নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও এখনো কোনো বই পায়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। কারণ, মাধ্যমিকের ৯৯ ভাগ বই এখনো চট্টগ্রামে পৌঁছায়নি। জেলায় বইয়ের চাহিদা সব মিলিয়ে ২ কোটি ৪৮ লাখ। এসেছে মাত্র আড়াই লাখ বই, যা মোট চাহিদার ১ শতাংশ।

এবার বছরের শুরুর দিন সব শিক্ষার্থী সব বই পাবে না। যদিও এনসিটিবি জানিয়েছে, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি করে বই বছরের প্রথম দিনে বিদ্যালয়ে পৌঁছে যাবে। এসব শ্রেণির আরও পাঁচটি করে বই ১০ জানুয়ারির মধ্যে, বাকি বইগুলো ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থী হাতে পাবে। তবে এ সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামে বই আসবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা।

কলেজিয়েট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রেহানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁরা কোনো বই পাননি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জন, আগের দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র দেওয়া, দেরি করে পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা, ছাপাসংক্রান্ত কাজে বিলম্বের কারণে এবার দেরিতে বই আসছে। চট্টগ্রামে আগের বছরগুলোতে ডিসেম্বরের মধ্যে অর্ধেক বই চলে আসত। এবার নতুন প্রেক্ষাপটে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

কোন উপজেলায় কত বই দরকার

শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫৬৬, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৬৩টি। এ ছাড়া জেলায় দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে ১২৭টি, আলিম ৩৬টি, ফাজিল ৬৪টি ও কামিল ১৯টি। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯৯৪।

তথ্যমতে, চট্টগ্রাম নগরের ৬টি শিক্ষা থানায় বইয়ের চাহিদা ৬৮ লাখ ৭ হাজার ২৩৫টি। এর বাইরে বাঁশখালী উপজেলায় ৯ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭০, বোয়ালখালীতে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৯৫০, সন্দ্বীপে ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭০, হাটহাজারীতে ১০ লাখ ১৭ হাজার ৯০০, চন্দনাইশে ৪ লাখ ২২ হাজার ১৬০, রাউজানে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৩৯১, মিরসরাইয়ে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ১৩০, আনোয়ারায় ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫২০, কর্ণফুলীতে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯০০, সাতকানিয়ায় ৮ লাখ ৫২ হাজার ২৬০, সীতাকুণ্ডে ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৭০০, ফটিকছড়িতে ১১ লাখ ৬৮ হাজার ৬০০, লোহাগাড়ায় ৯ লাখ ৫৩ হাজার ১৫০, পটিয়ায় ৮ লাখ ৭৬ হাজার ১৫০, রাঙ্গুনিয়ায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬০টি বইয়ের চাহিদা রয়েছে।

দেশে উৎসব করে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয় ২০১০ সালে। তবে গত দু-তিন বছর শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে সব নতুন বই দেওয়া যায়নি। গত বছর চট্টগ্রামের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শ্রেণির শিক্ষার্থীই বছরের প্রথম দিন সব বই পায়নি।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন শিক্ষাক্রম কার্যত বাতিল হয়ে গেছে। এরপর এক যুগ আগে তৈরি পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে জন্য এবার বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ৪৪১টি বই পরিমার্জন করে এনসিটিবি। এ প্রক্রিয়ায় পাঠ্যবইয়ের বেশ কিছুসংখ্যক গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বা বিষয়বস্তু বাদ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন করে স্থান পাচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তুসহ নতুন কিছু গল্প-কবিতা। পুরোনো শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ায় এবার মোট বইয়ের সংখ্যাও বাড়ছে।

জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা প্রথম আলোকে বলেন, বই আসা শুরু হয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বেশ কিছু বই ইতিমধ্যে এসেছে। ধাপে ধাপে অন্যান্য শ্রেণির বই আসছে। তবে বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ, চাহিদা ২ কোটি ৪৪ লাখ ৩২ হাজার ৯৩ কপি।

প্রাথমিকেও সংকট

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর চট্টগ্রাম জেলায় প্রাথমিকে বইয়ের চাহিদা প্রায় ৪৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত বই এসেছে ১১ লাখ ৮৭ হাজারের মতো, যা চাহিদার ২৮ শতাংশের মতো। এর মধ্যে পটিয়া, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, ফটিকছড়ি, সন্দ্বীপ, বোয়ালখালী ও বাঁশখালী উপজেলায় কোনো বই পৌঁছায়নি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এখনো সব বই আসেনি। চাহিদার মাত্র ২৮ শতাংশ বই এসেছে। আশা করা যায় জানুয়ারি মাসের মধ্যে সব বই এসে যাবে।