‘আগুনে পুড়ে আদরের সন্তানের এমন মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হয়’
‘অনেক কষ্ট করে মানুষ তাদের সন্তানদের লালন-পালন করে বড় করে। অনেক স্বপ্ন থাকে। অসুখ হয়ে যদি মারা যেত, তাহলে মনকে সান্ত্বনা দেওয়া যেত। কিন্তু আগুনে পুড়ে আদরের সন্তানের এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। কষ্টে বুকটা ফেটে যায়।’
আজ শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের ভুঁইগড় পশ্চিমপাড়া এলাকার বাড়িতে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া শান্ত হোসেনের (২৩) মা লিপি বেগম।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে আগুনে পুড়ে শান্তসহ ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। শান্ত হোসেন গ্রিন কোজি ভবনের নিচতলার ওয়াফেল অ্যান্ড জুস বারে সহকারী শেফের কাজ করতেন। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে তাঁর লাশ স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জীবিকার তাগিদে শান্তর বাবা আমজাদ হোসেন পাঁচ বছর আগে সৌদিপ্রবাসী হন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে শান্ত সবার বড়। ছোট ভাই প্রান্ত হোসেন কবি নজরুল কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনা করছে। আর ছোট বোন আমেনা আক্তার তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
ছেলের মৃত্যুতে মা লিপি বেগম বিলাপ করছিলেন। বিছানায় বসে তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন দাদি মাহমুদা আক্তার, নানি ফজিলা বেগম, ফুফু নুরুন নাহারসহ প্রতিবেশীরা।
শান্তর মা লিপি বেগম প্রথম আলোকে বলেন, যেদিন ওই ভবনে আগুন লাগে, ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে মুঠোফোনে ছেলে শান্তর সঙ্গে তাঁর শেষ কথা হয়। শান্ত ফোন করে তাদের সবার খোঁজখবর নেন। রেস্টুরেন্টের অনেক পদ বানানোর কাজ শিখছে বলে জানিয়েছিলেন। আর্থিক অনটনে উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষা দিতে পারেননি শান্ত। কিন্তু ছোট ভাই-বোনের পড়াশোনা করানোর বিষয়ে খুবই আগ্রহী ছিলেন। আগুন লাগার খবর পেয়ে মুঠোফোনে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন মা। কিন্তু ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ছেলের এমন মৃত্যুতে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না সৌদিপ্রবাসী বাবা আমজাদ হোসেন। মুঠোফোনে আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ফোন করলেই ছেলে একটা হাসি দিয়ে বলত, বাবা, তুমি কেমন আছ? ওর হাসিমুখটাই চোখের সামনে ভেসে উঠছে।’
শান্তর ভাই প্রান্ত হোসেন বলে, ভাইয়ের শেফ হওয়ার ইচ্ছা ছিল। এ জন্য ভাই অনেক কষ্ট করতেন। এতগুলো মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানায় সে।
কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম শান্তর মৃত্যুর বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ধরনের মৃত্যু আমাদের কাম্য নয়।’