শ্যামনগরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে রক্ষা পেল ‘মিজান হুজুরের আস্তানা’ ও মাদ্রাসা

সাতক্ষীরা শ্যামনগরে ‘বাতিল প্রতিরোধ কমিটি ও শ্যামনগরের সর্বস্তরের তৌহিদি জনতা’-এর ব্যানারে মিজান হুজুরের আস্তানা ভাঙার জন্য আসেন মুসল্লিরা। শুক্রবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে ‘মিজান হুজুরের আস্তানা’ ও জামিয়া ইসলামিয়া রাশিদিয়া হোসাইনাবাদ মাদ্রাসা ভাঙচুর না করে ফিরে গেছেন মুসল্লিরা। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

‘বাতিল প্রতিরোধ কমিটি ও শ্যামনগরের সর্বস্তরের তৌহিদি জনতা’-এর ব্যানারে সহস্রাধিক মুসল্লি ওই মাদ্রাসাকে ‘ভণ্ড পীরের আস্তানা’ আখ্যায়িত করে গুঁড়িয়ে দিতে অগ্রসর হলে পথে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাঁদের আটকে দেয়। এ সময় মিজানকে গ্রেপ্তার করার জন্য আগামী সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করেন মুসল্লিরা।

মুসল্লিদের মধ্যে একজন বংশীপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল আহাদ। তিনি অভিযোগ করেন, উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ধুমঘাট অন্তখালী গ্রামে জামিয়া ইসলামিয়া রাশিদিয়া হোসাইনাবাদ মাদ্রাসাটি অবস্থিত। প্রায় ২০ বছর আগে মাওলানা আবদুস সবুরের প্রতিষ্ঠিত ওই মাদ্রাসার দায়িত্ব পাওয়ার পর মিজানুর রহমান সেখানে নানা ধরনের ‘কুফরি কার্যক্রম’ চালুসহ নিজেকে পীর দাবি করে বসেন। পরে ওলামা–মাশায়েখরা মিজানকে ‘ভণ্ড’ ঘোষণা করলে তাঁর আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে স্থানীয় মুসল্লিরা কর্মসূচি দেন।

শ্যামনগর উপজেলা সদরের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে (৭ ফেব্রুয়ারি) জুমার নামাজে পর উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করে বাতিল প্রতিরোধ কমিটি ও উপজেলার সর্বস্তরের তৌহিদি জনতা মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি করেন। ওই বিক্ষোভ মিছিল থেকে সাত দিনের মধ্যে মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা না হলে ১৪ ফেব্রুয়ারি জুমার নামাজের পর মিজান হুজুরের আস্তানা ও জামিয়া ইসলামিয়া রাশিদিয়া হোসাইনাবাদ মাদ্রাসা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

সাতক্ষীরা শ্যামনগরে মিজান হুজুরের আস্তানা ভাঙার জন্য পদযাত্রা কর্মসূচি করেন মুসল্লিরা। শুক্রবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বেলা তিনটা থেকে উপজেলার বংশীপুর মোড়ে সহস্রাধিক মুসল্লি জড়ো হন। পরে সেখান থেকে বাতিল প্রতিরোধ কমিটি ও ওলামা পরিষদের নেতৃত্বে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মুসল্লিরা ওই মাদ্রাসার উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু করেন। তাঁরা মাদ্রাসার নামে সেখানে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হওয়ার পাশাপাশি নিজেকে পীর দাবিকারী মিজানুর রহমান একজন ‘ভণ্ড’ বলে অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, তাঁকে মাদ্রাসা থেকে তাড়াতে ষড়যন্ত্র করছেন তাঁর প্রতিপক্ষ কিছু মানুষ।

শ্যামনগর বাতিল প্রতিরোধ কমিটির সম্পাদক হাফেজ মোখলেছুর রহমান বলেন, নিজেকে পীর দাবি করে ‘ভণ্ড’ মিজানুর রহমান নিজের আস্তানায় নানা ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড করছেন। সোমবারের মধ্যে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া না হলে তাঁর আস্তানা ধ্বংস করা হবে বলেও তিনি ঘোষণা দেন।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হ‌ুমায়ূন কবির বলেন, মুসল্লিদের কাছে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ লিখিত আকারে প্রমাণসহ দিতে বলা হয়েছে।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে প্রশাসন চেষ্টা করছে। আইন কেউ নিজের হাতে তুলে না নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসায় দুই পক্ষকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।