শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন, ঝলসে গেল স্ত্রীসহ তিনজনের শরীর
দাম্পত্য কলহের জেরে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় স্ত্রীসহ তিনজনের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। এতে ওই তিনজন দগ্ধ হয়েছেন। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার গওলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দগ্ধ তিনজনকে উদ্ধার করে কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন ঢাকার ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের হাসান আলীর স্ত্রী শারমিন আক্তার (৩০), তাঁর চাচি শিরিন আক্তার (৫৫) ও চাচাতো ভাই রুবেল হোসেন (৩২)। ঘটনার পর অভিযুক্ত হাসান আলী পালিয়ে যান।
পুলিশ, ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর আগে ধামরাইয়ের রাজাপুর গ্রামের হাসান আলীর সঙ্গে সাটুরিয়া উপজেলার গওলা গ্রামের মৃত আতোয়ার হোসেনের মেয়ে শারমিন আক্তারের বিয়ে হয়। এই দম্পতির আট বছরের একটি ছেলেসন্তান আছে। কয়েক বছর ধরে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এ নিয়ে হাসান তাঁর স্ত্রী শারমিনকে মারধরও করতেন। দাম্পত্য কলহের জেরে গত সোমবার অভিমান করে ছেলেকে নিয়ে শারমিন গওলা গ্রামে বাবার বাড়িতে চলে যান।
আজ সকালে শ্বশুরবাড়িতে যান হাসান আলী। সেখানেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে শারমিন পাশের চাচার বাড়িতে যান। সকাল ১০টার দিকে চাচাশ্বশুরের ঘরের ভেতর গিয়ে শারমিনের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করেন হাসান। এ সময় চাচি শিরিন ও চাচাতো সম্বন্ধী (শারমিনের চাচাতো ভাই) রুবেল তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে তাঁদের শরীরেও কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন। এতে তাঁদের তিনজনের শরীরে আগুন ধরে যায়। প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ততক্ষণে তাঁদের তিনজনের শরীর আগুনে পুড়ে যায়। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁদের উদ্ধার করে শিরিন ও রুবেলকে মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান এবং শারমিনকে জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।
দুপুর ১২টার দিকে কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, অগ্নিদগ্ধ মা শিরিন ও তাঁর ছেলে রুবেল কাতরাচ্ছেন। চিকিৎসক ও নার্সরা তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাঁদের শরীরের বেশির ভাগ অংশ ঝলসে গেছে।
জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত এক নারী চিকিৎসক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, কী কারণে তাঁদের শরীর পুড়ে গেছে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শারমিনের মামা মো. বাসু প্রথম আলোকে বলেন, বিনা কারণে হাসান তাঁর ভাগনি শারমিনকে প্রায়ই মারধর করতেন। এ নিয়ে সামাজিকভাবে মীমাংসার জন্য একাধিকবার সালিসও হয়েছে। আজ সকালে তাঁর ভাগনিকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাসান শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে ভাগনির চাচি ও চাচাতো ভাইকেও একইভাবে আগুন দিয়ে ঝলসে দেওয়া হয়।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত হাসান পলাতক। হাসানের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর বন্ধ থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাটুরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মানবেন্দ্র বালো প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে ওই বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।