বিস্ফোরক উদ্ধারের জেরে গোপালপুর পৌর বিএনপির কার্যালয় বন্ধ, বিএনপির দাবি, ‘সাজানো নাটক’
দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা ককটেল ও পেট্রলবোমা উদ্ধারের জের ধরে নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌর বিএনপির কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে কার্যালয়টি বন্ধ করে দেয় লালপুর থানা-পুলিশ। এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
নাটোরের বিএনপি নেতাদের দাবি, রাজশাহীর আসন্ন বিভাগীয় সমাবেশ উপলক্ষে এই ঘটনা আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ‘সাজানো নাটক’।
লালপুর থানা-পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাত ৯টার দিকে বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরীফ আল রাজীবের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গোপালপুর বাজারসংলগ্ন পৌর বিএনপির কার্যালয়ে আসে। কার্যালয়টির সামনের সড়কের পাশের বটগাছের নিচে ময়লা–আবর্জনার মধ্যে একটি ব্যাগ কুড়িয়ে পায় তারা। ব্যাগের ভেতর থেকে কালো স্কচস্টেপে মোড়ানো চারটি ককটেলসদৃশ কৌটা ও পেট্রলভর্তি দুটি বোতল উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় তারা কার্যালয়টির ভেতরের টেবিল-চেয়ার ও নেতাদের ছবি ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। পরে তারা পৌর বিএনপির কার্যালয়টি বন্ধ করে দেয়।
স্থানীয় লোকজন প্রথম আলোকে বলেছেন, বিএনপি কার্যালয় বন্ধ করার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাঁদের বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আদালত অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত বিএনপির কার্যালয়টি বন্ধ থাকবে। তিনি আরও বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থলে আসার আগে এখানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলেও তাঁদের কাছে অভিযোগ আছে। কার্যালয়ের সামনের সড়ক দিয়ে যাওয়া যুবলীগের কর্মীদের সঙ্গে ওই কার্যালয় থেকে বের হওয়া কিছু যুবকের ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটেছে বলেও তিনি সে সময় বলেন।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ যাওয়ার আগে-পরে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীকে দেখা যায়নি।
এ ঘটনায় গতকাল শনিবার রাতেই স্থানীয় যুবলীগ কর্মী নেওয়াজ শরীফ বাদী হয়ে মারপিটের অভিযোগে একটি মামলা করেছেন। এতে ৫ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। পুলিশও বাদী হয়ে একই আসামিদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে পৃথক মামলা করেছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোনোয়ারুজ্জামান।
নাটোর জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজশাহীর আসন্ন বিভাগীয় সমাবেশ উপলক্ষে ঘটনাটি আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সাজানো নাটক। কথিত বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনার ধোঁয়া তুলে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করাই এর উদ্দেশ্য। এটিকে পুঁজি করে হয়তো অসংখ্য বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলাও হবে। পুলিশের কথামত যদি কার্যালয়ের বাইরে থেকেই বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার হয়ে থাকে, তাহলে দলীয় কার্যালয় কেন বন্ধ করা হলো?’ তিনি জানান, তিন দিন আগে কিছু যুবলীগ কর্মী ওই কার্যালয়ে এসে প্রকাশ্যে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন।
বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরীফ আল রাজীব প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির কার্যক্রম বন্ধ করা হয়নি। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে আপাতত পৌর বিএনপির কার্যালয়টি বন্ধ থাকবে। স্থানীয় লোকজনের দেওয়া খবরের ভিত্তিতে তাঁরা পৌর বিএনপির কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। কার্যালয়ের সামনে থেকে বিস্ফোরক সদৃশ ককটেল ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলেও তাঁরা জেনেছেন। উদ্ধার করা আলামত বিস্ফোরক কি না, তা পরীক্ষা করা হবে।