‘সাংবাদিকদের আর্থিক সুরক্ষা ও সার্বিক কল্যাণে বহুমুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে কল্যাণ ট্রাস্ট’
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএফইউজের সাবেক সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, সাংবাদিকদের আর্থিক সুরক্ষা ও সার্বিক কল্যাণে বহুমুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে কল্যাণ ট্রাস্ট। বিপন্ন অসহায় সাংবাদিক ও তাঁদের পরিবারের পাশে থাকবে ট্রাস্ট। স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার প্রশ্নে কোনো আপস করা হবে না। ট্রাস্টের সহায়তা প্রকৃতভাবে যাঁরা প্রাপ্য, তাঁরাই পাবেন।
আজ সোমবার ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার সাংবাদিকদের মধ্যে ট্রাস্টের আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম আবদুল্লাহ এ কথাগুলো বলেন।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের জেলা সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট ও সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহ যৌথভাবে ‘সাংবাদিকদের আর্থিক সুরক্ষা ও কল্যাণে করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য ও বিএফইউজের নেতা শাহীন হাসনাত, সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সভাপতি আইয়ুব আলী, যুগ্ম সম্পাদক আমান উল্লাহ আকন্দ জাহাঙ্গীর, এখন টিভির ব্যুরো চিফ হারুনুর রশিদ, যমুনা টিভির ব্যুরো চিফ এস এম হোসাইন শাহীদ, মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার মতিউল আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত এটিএন বাংলার সাংবাদিক শাহ আলম ও ইনকিলাবের ঈশ্বরগঞ্জের সাংবাদিক আতাউর রহমান। অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ বিভাগের ২০ সাংবাদিকের হাতে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম আবদুল্লাহ বলেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে বর্তমান সরকার বিশেষত তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট ইতিমধ্যে বহুমুখী কল্যাণ ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। সাংবাদিকদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অস্বচ্ছল প্রবীণ সাংবাদিকদের মাসিক ভাতার আওতায় আনার কাজ চলছে। এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাস্ট। পেশাদার সাংবাদিকদের একটি ডেটা ব্যাংক গড়ে তোলার কথা ভাবা হচ্ছে। এতে নতুন নতুন কল্যাণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজতর হবে।
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ট্রাস্টের নীতিমালা অনুযায়ী যাঁরা আর্থিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য, তাঁদের কেউ আবেদন করলে বঞ্চিত হবেন না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর ৪০ দিনের মাথায় ৩৫০ সাংবাদিককে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মৃত্যুবরণকারী ৩০ সাংবাদিকের পরিবার ও ক্যানসার, লিভার সিরোসিসসহ জটিল রোগে আক্রান্ত ১০০ সাংবাদিককে চিকিৎসার জন্য সহায়তা দেওয়া হয়। এসব সহায়তার জন্য এখন কোনো ধরনের তদবির করতে হয় না। সাংবাদিকদের মেধাবী সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগও গ্রহণ করেছে কল্যাণ ট্রাস্ট।
স্বাধীন সাংবাদিকতায় এখন আর কোনো অন্তরায় সৃষ্টি করা হচ্ছে না দাবি করে এম আবদুল্লাহ বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বেসরকারি টেলিভিশনে বিটিভির সংবাদ প্রচারের যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা–ও তুলে নেওয়া হয়েছে। টিভি টক শোতে কে থাকবেন আর কে থাকবেন না, তা এখন আর নির্ধারণ করে দেওয়া হয় না। ফ্যাসিবাদের তল্পি বহন করে যাঁরা সাংবাদিকতাকে কলুষিত করেছেন, সাংবাদিক–সমাজকে জনসাধারণের কাছে হেয় করেছেন, তাঁদের অবশ্যই জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।
কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য শাহীন হাসনাত বলেছেন, মানুষের মর্যাদা ও সাংবাদিকদের মর্যাদা অভিন্ন। তাই পেশাদারত্বের সঙ্গে মর্যাদা রক্ষায় সাংবাদিকদের সচেষ্ট থাকতে হবে। তথ্য গোপন করে অসত্য তথ্য দিয়ে জেনেশুনে মিথ্যার মিশ্রণ সাংবাদিকতার পরিপন্থী বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রণ করবেন না। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের লালন এই নীতি অনুসরণ করলে দেশে কোনো ফ্যাসিবাদের উত্থান হবে না। নতুন বাংলাদেশে কোনো ফ্যাসিবাদ থাকবে না। বিভক্তি নয়, ঐক্যের জন্য সাংবাদিকদের পেশাদারত্ব বজায় রাখতে হবে। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাংবাদিকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।