বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম: নাবিক ইব্রাহিম
‘সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ার পর বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই ছেলেকে আর কখনো দেখতে পাব কি না, সেই চিন্তা শুধু মাথায় আসত। শুরুর দিকে জলদস্যুদের হাতে জাহাজের অনেক কর্মকর্তাকে নাজেহাল হতে হয়েছে। পরে অবশ্য জলদস্যুরা খারাপ আচরণ করেনি। তবে তাদের কথা সবাইকে শুনতে হতো।’
সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছে ফেরার পর এসব কথা বলেন জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিক ইব্রাহিম খলিল উল্যাহ। দস্যুদের হাতে প্রায় এক মাস জিম্মি থাকা জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিকের একজন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলের দিকে একটি ছোট জাহাজে করে ইব্রাহিম খলিল উল্যাহসহ নাবিকেরা চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি-১) জেটিতে পৌঁছান। জাহাজ থেকে নেমেই ছুটে আসেন ফেনী শহরের নাজির রোডে অবস্থিত তাঁর ভাড়া বাসায়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি বাসায় পৌঁছান।
আজ বুধবার বিকেলে ইব্রাহিম খলিল উল্যাহর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তাঁকে দেখতে প্রতিবেশী ও স্বজনেরা ভিড় করেছেন। তাঁর কাছে জলদস্যুদের বিষয়ে নানা বিষয় জানতে চাচ্ছেন। জিম্মি অবস্থার স্মৃতি তাঁদের তুলে ধরছেন ইব্রাহিম খলিল উল্যাহ।
ইব্রাহিম ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের মোমারিজপুর গ্রামের আবুল হোসেনের বড় ছেলে। তিনি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে ইলেকট্রিশিয়ান পদে কর্মরত। জানতে চাইলে ইব্রাহিমের মা রৌশনারা বেগম বলেন, গত দুই মাস কান্নাকাটি করে দিন কাটিয়েছেন। ছেলের জন্য উদ্বিগ্ন থাকায় খেয়ে না খেয়ে সময় পার হয়েছে। এখন ছেলেকে কাছে পেয়ে তাঁর ঘরে ঈদের আনন্দ।
ইব্রাহিমের স্ত্রী উম্মে সালমা বলেন, তাঁর স্বামী এর আগে একটানা আট মাস পর্যন্ত জাহাজে ছিলেন। তবু এবার স্বামীর ঘরে ফেরার আনন্দ অন্য রকম। এত দিন তাঁদের অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কেটেছে। ইব্রাহিমের বড় ছেলে রেদোয়ান বিন ইব্রাহিম বলেন, ‘রাতে আব্বু বাসায় ফিরেছে। আব্বুকে কাছে পেয়ে কী যে ভালো লাগছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’
ছেলে ঘরে ফেরায় বেশ খুশি বাবা আবুল হোসেনও। তিনি বলেন, ‘ছেলে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়েছেন শুনে নামাজ পড়ে তার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি। এখন ছেলে ফিরে আসায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।’