রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: পরিস্থিতি থমথমে, বিক্ষোভের ডাক শিক্ষার্থীদের
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের সংঘর্ষের ঘটনার পর আজ রোববার সকালে ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ছোট ছোট যানবাহন চলতে দেখা গেলেও বড় যানবাহন বিকল্প পথে চলছে। রাত তিনটার পর রাজশাহী রেলস্টেশন থেকে ট্রেন চলাচলও শুরু হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আজ বৈঠকে বসবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও আলোচনা করতে চায় প্রশাসন। এদিকে স্থানীয় লোকজনের হামলা ও পুলিশের রাবার বুলেট নিক্ষেপের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করার ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল শনিবার বগুড়া থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে বাসের আসনে বসাকে কেন্দ্র করে চালক ও চালকের সহকারীর সঙ্গে এক শিক্ষার্থীর কথা-কাটাকাটি হয়। পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকে পৌঁছালে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে আবার বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ সময় স্থানীয় এক দোকানদার এসে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে ওই দোকানদারের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জড়ো হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। তখন শিক্ষার্থীরাও তাঁদের পাল্টা ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
দফায় দফায় এ সংঘর্ষে স্থানীয় মানুষের হামলায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ছোড়ে। শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর এলাকায় দোকানে ও পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি সাত প্লাটুন বিজিবি কাজ করছে।
আজ সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সব সময় পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা দেওয়া ছিল মূল কাজ। আমরা সেটাই চেষ্টা করেছি।’ তিনি আরও বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেছে। একটু পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তাঁরা। এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
সংঘর্ষের ঘটনার পর আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে দূর পাল্লার বাস ও ট্রাক চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে অটোরিকশাসহ ছোট ছোট যানবাহন। ভারী যানবাহন রাজশাহী বাইপাস সড়ক দিয়ে চলাচল করছে বলে জানা গেছে। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিনোদপুর ফটক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কেউ কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না।
সংঘর্ষের পর গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের পাশের রেললাইনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ায় ঢাকাগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন রাজশাহী স্টেশন ছাড়তে পারেনি। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একটি মেইল ট্রেন আবদুলপুর রেলস্টেশনে অপেক্ষায় ছিল। পরে শিক্ষার্থীরা রাত দুইটায় অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন। ফলে রাত ১১টা ২০ মিনিটের ধূমকেতু ট্রেন রাত ৩টার দিকে রাজশাহী থেকে ছেড়ে গেছে। এর পর থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।