চৌদ্দগ্রামের লাঞ্ছিত সেই মুক্তিযোদ্ধার গ্রেপ্তারের দাবি জামায়াতের, থানা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইসহ চৌদ্দগ্রামের খুনি–সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল। শনিবার সকালে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সদরেছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনার পর তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আজ শনিবার উপজেলা সদরে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান দলটির নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি ওই ঘটনায় হওয়া মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।

আজ সকালে ‘চৌদ্দগ্রামের খুনি, সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল’ ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করে উপজেলা জামায়াত। প্রথমে মিছিল নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় হায়দার শপিং কমপ্লেক্সের সামনে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

সমাবেশে উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমরা এ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বলতে চাই, সন্ত্রাসী, লম্পট, চাঁদাবাজ আবদুল হাই কানুকে যদি গ্রেপ্তার না করা হয়, তাহলে জনতা চৌদ্দগ্রামের রাজপথ অবরোধ করবে। চৌদ্দগ্রামের সব শহীদের খুনিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। চৌদ্দগ্রামের মানুষ বিগত সময়ে রাজপথে অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখেছে, কিন্তু ৫ আগস্টের পর কোনো অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। আমরা প্রশাসনকে জানিয়ে দিতে চাই, অবিলম্বে সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে চৌদ্দগ্রামের প্রতিটি ইউনিয়নে আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ করব, মানববন্ধন করব, রাজপথ অবরোধ করব, প্রয়োজনে চৌদ্দগ্রাম থানা ঘেরাও করব। তাই আবদুল হাই কানু থেকে শুরু করে সব সন্ত্রাসীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।’

এর আগে ২২ ডিসেম্বর দুপুরে উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। ওই দিন রাতেই এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। আবদুল হাই ঘটনাস্থলের পাশের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এ ছাড়া একই সংগঠনের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সাবেক সহসভাপতি। ঘটনার শুরু থেকেই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর পরিবারের অভিযোগ, লাঞ্ছনাকারীরা সবাই স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী। আবদুল হাইকে এলাকা ছাড়া করার জন্য হুমকি দেওয়া হয়।

শুরুতে অস্বীকার করলেও ঘটনার এক দিন পর মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরানোর নিন্দা জানিয়ে দুই সমর্থককে বহিষ্কার করে জামায়াত। সর্বশেষ এ ঘটনায় ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, জুতার মালা পরানোয় ১০০ কোটি টাকার মানহানি ও মারধরের অভিযোগে গত বুধবার চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি মামলা করেন আবদুল হাই। মামলায় জামায়াতের বহিষ্কৃত সমর্থক আবুল হাশেম, অহিদুর রহমানসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়। ঘটনার পর থেকে হাশেম, অহিদুর রহমানসহ মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।

আজ সন্ধ্যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই দাবি করেন, আওয়ামী লীগ করার কারণে নয়; বরং বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় তাঁর গলায় জুতার মালা পরানো হয়। ঘটনার দিন তাঁরা বলেছিলেন, তিনি যেন কখনো মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় না দেন। তিনি বলেন, ‘থানায় মামলা করেছি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ অপমানের বিচার চাই। দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার চাই।’

তবে উপজেলা জামায়াতের আমির মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল হাই হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি। তিনি আওয়ামী লীগের দোসর। তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। আবদুল হাই একা নন, বিগত সময়ে চৌদ্দগ্রামে যারা তাঁদের নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে, সব খুনিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আবদুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হোক তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু শুধু মানহানির মামলা না করে সাজানো ও বানোয়াট চাঁদাবাজির মামলা করে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি।’

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ টি এম আক্তার উজ জামান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার করা মামলার আসামিরা এলাকা থেকে পলাতক। তাঁরা তাঁদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। আজ সকালে জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশের কথা শুনেছেন। কিন্তু পুলিশের কাছে ওই মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নেই। তাহলে তাঁকে কেন গ্রেপ্তার করবেন? তাঁর (আবদুল হাই) বিরুদ্ধে আগে পাঁচটি মামলা হলেও বর্তমানে দুটি মামলা চলমান। সেগুলোও আদালতে বিচারাধীন। থানায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।