ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে স্বাধীনতা দিবস পালনের নামে কুপন দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দুই গোপনীয় সহকারী (সিএ) নিতাই কুমার সাহা ও সুজন পাল। চাহিদামতো চাঁদা না দেওয়া হলে পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে হয়রানি করা হবে বলে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানান, ইউএনও কার্যালয়ের সিএ সুজন পাল ও নিতাই কুমার সাহা ব্যবসায়ীদের দেওয়া কুপন দিয়ে টাকার বিভিন্ন অঙ্ক উল্লেখ করে ‘২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন হিসেবে অনুদান’ কথাগুলো লিখে সিল দিচ্ছেন। গোল সিলে লেখা, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, চরভদ্রাসন’।
১৮ ও ১৯ মার্চ বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে দেওয়া এ-জাতীয় ছয়টি কুপন প্রথম আলোর হাতে এসেছে। কোনোটিতে ২৫ হাজার টাকা, কোনোটিতে ৪ হাজার টাকা, কোনোটিতে ৩ হাজার টাকা আবার কোনোটিতে ২ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে।
ইউএনও কার্যালয় থেকে এ-জাতীয় কতটি কুপন ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়েছে, সে সংখ্যা অবশ্য জানা যায়নি। তবে কুপন হাতে পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পরিশোধ করেছেন, এমন চারজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আসবাবের ব্যবসায়ী বলেন, ইউএনও কার্যালয়ের ওই দুই সিএ কুপন দেওয়ার পর তাঁর কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেছেন ইউএনও কার্যালয়ের সিএ সুজন পাল। করাতকলের এক মালিক বলেন, তাঁকে কুপন দেওয়ার পর ৩ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেছেন সুজন পাল।
ওই দুই ব্যবসায়ীই বলেন, চাঁদার কুপন দেওয়ার সময় টাকা কম দিলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে হয়রানির হুমকি দেওয়া হয়েছে তাঁদের।
একজন সার ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, গত ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস পালনের সময় তাঁদের চার ডিলারের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে মোট এক লাখ টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য করা হয়। এবারও তাঁদের কাছ থেকে ২৫ হাজার করে টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে।’
বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে কুপনে টাকার অঙ্ক লিখে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে ইউএনওর সিএ সুজন পাল। গতকাল সোমবার বেলা একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ রেওয়াজ তো অনেক দিন ধরেই চালু রয়েছে। সে রেওয়াজ অনুসরণ করছিমাত্র।’
ইউএনওর আরেক সিএ নিতাই কুমার সাহা গতকাল বিকেল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আরেক সিএ সুজন পাল দেখেছেন। এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চরভদ্রাসনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ফয়সল বিন করিম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর অফিস থেকে কুপনের মাধ্যমে জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তিনি দাবি করেন, ‘আমি কোনো সিএকে এ পরামর্শ দিইনি।’ ইউএনও বলেন, বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।