টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা
কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। নিষেধাজ্ঞার কারণে আজ বুধবার সকাল থেকে নৌপথটি দিয়ে কোনো সার্ভিস ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করেনি। একই সঙ্গে নাফ নদীর বাংলাদেশের জলসীমায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
নাফ নদী দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হলেও টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ এবং কক্সবাজার থেকে সাগরপথে পর্যটক ও বাসিন্দাদের যাতায়াত স্বাভাবিক থাকবে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে গত শনিবার থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত পাঁচ দিন ধরে মিয়ানমার থেকে পণ্যবাহী কোনো কার্গো ট্রলার ও জাহাজ টেকনাফ স্থলবন্দরে আসেনি। মালামাল খালাস করা কার্গো ট্রলার ও জাহাজ মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারছে না।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন এ তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নাফ নদীতে সব ধরনের নৌযান চলাচল পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। নৌযান নিয়ে কেউ যাতে নাফ নদীতে না নামে, এ বিষয়ে সতর্ক করতে মাইকিং করা হচ্ছে।
ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন আরও বলেন, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ পুরোপুরি দখল নিয়েছে বলে জানা গেছে। এ পরিস্থিতিতে নাফ নদীর সীমান্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নৌযান চলাচল না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধ ও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় নাফ নদী এবং স্থলসীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর নাফ নদীর মিয়ানমার জলসীমায় নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে আরাকান আর্মি নিষেধাজ্ঞা দেয় বলেও জানান তিনি।
টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমদ বলেন, সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাঁদের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে সকাল থেকে কোনো নৌযান চলাচল করেনি। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে নিত্যপণ্য ও যাত্রী নিয়ে পাঁচটি সার্ভিস ট্রলার চলাচল করেছে। উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ এবং কক্সবাজার দিয়ে জাহাজসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল স্বাভাবিক থাকায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না বলে জানান তিনি।
ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেড টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত শুক্রবার মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর থেকে মাছভর্তি একটি কার্গো ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরের জেটিতে নোঙর করে। এরপর গত শনিবার থেকে আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত পাঁচ দিন আর কোনো ধরনের ট্রলার বা জাহাজ আসেনি। বর্তমানে মিয়ানমার থেকে মালামাল নিয়ে আসা চারটি কার্গো ট্রলার স্থলবন্দরের জেটিতে নোঙর করা অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে দুটি কার্গো ট্রলার থেকে মালামাল খালাস করা হলেও ট্রলারগুলো মিয়ানমারের ফেরত যেতে পারছে না।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, গত সোমবার বিকেল পর্যন্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে থেমে থেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এর পর থেকে আর কোনো বিস্ফোরণের শব্দ টেকনাফের বাসিন্দারা শুনতে পাননি।
সীমান্তের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাখাইনের বেশির ভাগ এলাকা বেশ কয়েক মাস ধরে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মংডু টাউনশিপের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ ছিল সরকারি বাহিনীর হাতে। সর্বশেষ সেটিও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আরাকান আর্মি। তবে এরপর মংডু টাউনশিপে সে দেশের সরকার কারফিউ জারি করেছে।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, রাখাইনে অশান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে থাকা তাঁদের স্বজনেরা মুঠোফোনে জানিয়েছেন, তাঁরা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না।
জানতে চাইলে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ বলেন, সীমান্তে চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশসহ সব ধরনের অপরাধ দমনে পেশাদারত্বের সঙ্গে বিজিবির সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। সীমান্তের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।