হরতাল হলে নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকতে হবে: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিএনপি সব কর্মসূচি পালন করছে, এরপরও সরকারের টনক নড়ছে না। শক্ত কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। শক্ত কর্মসূচি হিসেবে হরতাল হলে নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকতে হবে, এতে তাদের সঙ্গে (আওয়ামী লীগ) ও পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে এক দফা দাবিতে ভৈরব থেকে সিলেট অভিমুখে শুরু হওয়া তারুণ্যের রোডমার্চ শেষে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট নগরের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিকভাবেই আমরা আন্দোলন করব। অনেক দিন হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ করি নাই। আমরা তাদের মতো পথচারীকে বিবস্ত্র করিনি, আগুন দিয়ে মানুষ মারিনি। শেখ হাসিনার মতো লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ মারিনি। লাশের ওপর নাচানাচি করিনি।’
রোডমার্চ নিয়ে সংশয় ছিল উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন আমাদের নেত্রী প্রথম রোডমার্চের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও রোডমার্চে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন লন্ডনে। এ জন্য সংশয় ছিল, কার নেতৃত্বে রোডমার্চ করব। এতে জনগণের কেমন সাড়া পড়বে। দেখলাম, নেতা বিষয় নয়, জনগণ চায় এ সরকারের পতন। মানুষ আর এক মিনিটের জন্যও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এটাই বাস্তবতা।’
সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। নগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সরকারকে অনুরোধ করে বলেছিলেন, তাঁদের নেত্রীকে আরেকবার ক্ষমতায় রাখতে। তাঁরা উন্নয়নের কথা বলেন, কিন্তু জনগণের কাছে ভোট চাইতে ভয় পান। ভোট চোরকে মানুষ বিশ্বাস করে না। আমাদের পরিষ্কার কথা, জনগণের ক্ষমতা, ভোটের অধিকার, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র চাই।’
সমাবেশে প্রধান বক্তা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এক দফা, এক দাবিতে এই রোডমার্চ, তা হলো ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ। এই সংসদ, নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। এই দাবিতে মানুষ জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছে। দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে বিদায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। দেশের মানুষের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। কারণ তারা জানে, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। বিশ্ববাসী একটি গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য একটি নির্বাচন চায়। তাই সরকারের ভোট চুরি করার প্রকল্প ভেঙে দিতে হবে, তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ভোট চোর ও তাদের সহযোগী—সবার তালিকা করতে হবে। তাই সরকারকে বিদায় করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পরে এটি সবচেয়ে বড় মুক্তির সংগ্রাম। এ জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।’
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, আরিফুল হক চৌধুরী ও এনামুল হক চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান ও খায়রুল কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হাসান ও এমরান সালেহ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন, সহ ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী, মিজানুর রহমান চৌধুরী ও হাদিয়া চৌধুরী।
বেলা তিনটা থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। তবে বিকেল ৪টার দিকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়, সেটি চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। বৃষ্টির মধ্যেই নেতা–কর্মীরা মাঠে উপস্থিত থেকে স্লোগান দিচ্ছিলেন। রোডমার্চ সিলেটে এসে পৌঁছালে বক্তব্য দেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ।