যশোর শহর প্লাবিত, তিনটি ওয়ার্ডের ঘরবাড়িতে পানি
যশোরে এক সপ্তাহে ১৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে যশোর শহরের নিচু এলাকার তিনটি ওয়ার্ডের অন্তত ১৫টি রাস্তা ও মানুষের ঘরবাড়ি পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কয়েক দিন ধরে শহরের বিভিন্ন মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ও ভিডিও দিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষকে ভর্ৎসনা করছেন। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের এখন কিছুই করার নেই।
সরেজমিনে শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটু বৃষ্টি হলেই শহরের অন্তত ১৫টি সড়কে পানি জমে যায়। এর মধ্যে খড়কি, পিটিআই, নাজির শংকরপুর, খড়কি রূপকথা মোড় থেকে রেললাইন, বেজপাড়া চিরুনিকল, মিশনপাড়া, আরবপুর ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর, ষষ্ঠীতলাপাড়ার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েন পথচারী ও এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের ভেতর দিয়ে ভৈরব ও মুক্তেশ্বরী নামে দুটি নদ-নদী প্রবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে ভৈরব নদ দিয়ে শহরের উত্তরাংশ ও মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে শহরের দক্ষিণাংশের পানি নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু গত দেড় দশক শহরের দক্ষিণাংশের পানি মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে নামতে পারছে না। পয়োনিষ্কাশন নালার মাধ্যমে শহরের পানি হরিণার বিল দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত। কিন্তু ২০১০ সালে হরিণার বিলে যশোর মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। এরপর আশপাশে আরও অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এতে বিল দিয়ে পানি আগের মতো নিষ্কাশিত হতে পারছে না। ফলে ওর এলাকার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যশোর পৌরসভার মেয়র হায়দারগনি খানের সঙ্গে মুঠোফোন একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকসিমুল বারী আজ শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে আসলে এই মুহূর্তে পৌরসভার কিছুই করার নেই। নালা পরিষ্কার করলেও ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার পানি নিষ্কাশিত হতে পারছে না। কারণ, হরিণার বিল দিয়ে এসব এলাকার পানি নিষ্কাশিত হতো। সেই হরিণার বিলে অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এই পানি নিষ্কাশনের জন্য ২০ মিটার চওড়া সাড়ে চার কিলোমিটার লম্বা একটি খাল খনন করে বৃষ্টির পানি মুক্তেশ্বরী নদীতে নামিয়ে দিতে হবে। কিন্তু এই খাল খননের মতো এত টাকা পৌরসভার নেই। তবে আশার কথা হচ্ছে, প্রায় ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে। ওই প্রকল্পে এই খাল খননের বিষয়টি সংযুক্ত করা হবে।
মোকসিমুল বারী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের টাকা ছাড় করেনি। নির্বাচনের পরে হয়তো ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে। তখন জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হবে।
যশোর বিমানবন্দরের আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যশোরে ১৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ১০ অক্টোবর পর্যন্ত যশোরে আকাশ মেঘলা থাকবে। কখনো কখনো হালকা বৃষ্টি হতে পারে।