রংপুরে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ৩৮ টাকা বেশি দামে বিক্রি
রংপুরের বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলায় খুচরা দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ৩৮ টাকা অতিরিক্ত দামে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার সরকার খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৪৯ টাকা থেকে ১৫৭ টাকা এবং বোতলজাত তেল ১৬৭ টাকা থেকে ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু এরপরও বেশি দামে খোলা সয়াবিন বিক্রি হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন।
গত সোমবার সচিবালয়ে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের বাজারে তেলের দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। ফলে সরবরাহে আর কোনো ঘাটতি হবে না। বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ গত সোমবার থেকে স্বাভাবিক হবে। কিন্তু গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাণিজ্য উপদেষ্টার ওই ঘোষণার চার দিনেও রংপুরের বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি বরং খোলা সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম খুচরা পর্যায়ে লিটারপ্রতি আরও ৫-৭ টাকা বেড়েছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে বদরগঞ্জ বাজার থেকে বের হচ্ছিলেন কালুপাড়া এলাকার কৃষক ইয়ারুল ইসলাম (৫২)। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সউগ জিনিসের দাম বেশি। সোয়ামিন (সয়াবিন) ত্যালের বোতল বাজার থাকি পালাইছে। ১০টা দোকান ঘুরিয়াও পাও নাই। পরে চিমকিত (পলিথিন) হাফ লিটার ত্যাল ৯৮ টাকায় কিননু। সাত দিন আগোত এক পোয়া (২৫০ মিলি) খোলা ত্যালের দাম নিছিল ৪৪ টাকা।’
গতকাল তারাগঞ্জ বাজারের অনেক দোকান ঘুরে বোতলজাত সয়াবিন তেল না পেয়ে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল কেনেন ইকরচালি গ্রামের আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘খোলা সয়াবিন তেলের প্রতি ভরসা কম। তবুও কিনলাম। এক লিটারের দাম নিল ১৯৫ টাকা। গত সোমবার বোতলজাত তেল না পেয়ে একই দোকান থেকে ১৮৮ টাকা লিটার দরে আড়াই শ মিলি খোলা সয়াবিন তেল ৪৭ টাকায় কিনেছিলাম। দিন যাচ্ছে তেলের দাম বাড়ছেই। অথচ সরকার খোলা সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে লিটারপ্রতি ১৫৭ টাকা।’
তারাগঞ্জের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, সরকার খোলা সয়াবিন তেলের দাম গত সোমবার লিটারপ্রতি ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ার পর খুচরা বাজারে লিটারপ্রতি ৫-৮ টাকা দাম বেড়েছে। কিন্তু বুধবার তা বিক্রি হয়েছে ১৯৫-১৯৮ টাকায়। এত সংগ্রাম ও জীবনের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন প্রতিষ্ঠা করে লাভটা কী হলো? এখনো বাজারে এমন অরাজকতা চলে কেমন করে?
তারাগঞ্জ বাজারের একটি মুদিদোকানের মালিক পলাশ কুমার পাল বলেন, বোতলজাত সয়াবিন তেল কোনো দোকানেই নেই। এক মাস ধরে এই তেল পাচ্ছি না। খোলা সয়াবিন তেল গত বুধবার প্রতি লিটার ৮৪ টাকায় কিনে ৯৫ টাকায় বিক্রি করছি। শুনলাম ১৫৭ টাকা লিটার হিসেবে নাকি খোলা তেলের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু সেই তেলটা কোথায়? দেবে কবে?’
ওই বাজারের আরেকজন দোকানি মানিক কুমার দে বলেন, ‘সরকার তো রেট দিচ্ছে, কিন্তু তেল নেই। আসলে পেপার–পত্রিকায় একরকম, বাস্তবটা আরেক রকম।’
বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের তারাগঞ্জের পরিবেশক পলাশ রায় গতকাল বলেন, বাজারে তেলের ঘাটতির কারণে দাম বেড়েছে। ২ ডিসেম্বর ২০০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কেনার জন্য মেঘনা গ্রুপের ডিপোতে চাহিদাপত্রসহ টাকা পাঠিয়েছিলাম। এখনো তারা তেল দেয়নি। কবে দেবে তা বলতেও পারছে না।’
বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান গতকাল মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা বাজার মনিটরিং করছি। বেশি দামে তেল বিক্রির বিষয়ে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানাও বেশি দামে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রির অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।