এই অস্থিরতা দিয়ে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কী লাভ হচ্ছে: জোনায়েদ সাকি

ময়মনসিংহে আলোচনায় সভায় বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। সোমবার সন্ধ্যায় নগরের একটি রেস্টুরেন্টে
ছবি: প্রথম আলো

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘নির্বাচন ও সংস্কারকাজ যখন এগিয়ে চলছে, তখন আমরা দেখছি সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই অস্থিরতার উদ্দেশ্য কী? এই অস্থিরতা দিয়ে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কী লাভ হচ্ছে? কাজেই আমরা প্রত্যেক পক্ষকে আহ্বান জানাই দেশে যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলছে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত যেন যথার্থভাবে এগিয়ে যায় এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণে যেন আমরা সবাই মিলে এগিয়ে যেতে পারি, সেই দায়িত্বশীল আচরণ করা দরকার।’

আজ সোমবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ নগরের একটি রেস্টুরেন্টের হলরুমে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল এ কথাগুলো বলেন জোনায়েদ সাকি। ইফতারের আগে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু সেখানে একটি ঐক্যমতের জায়গা থাকতে হবে। কেউ কাউকে কিছু চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। একটি অভ্যুত্থান–পরবর্তী রাজনৈতিক পরিবেশে যে সিদ্ধান্ত হবে, সেগুলো প্রকাশ্যেই হচ্ছে। আলাপ–আলোচনায় যেকোনো প্রস্তাব আসতে পারে। কিন্তু সেসব আলোচনায় কে কী অবস্থান নেবে, তার প্রকাশ্য জায়গা আছে।’

জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, ‘আমরা যেমন আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। জুলাই-আগস্টসহ গত ১৫ বছরে যে গুম-খুন, নির্বিচার হত্যাকাণ্ড, লুণ্ঠন হয়েছে, সে কারণে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী শেখ হাসিনাসহ যাঁরা দায়ী তাঁদের, যাঁরা রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে এ সব অপতৎপরতা চালাতে সাহায্য করেছে, তাঁদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কেবল তাঁদের নয়, দল হিসেবে এই হত্যাকাণ্ডের দায় আওয়ামী লীগের কতটুকু, তারও বিচার করতে হবে। তার জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে। তারপর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঠিক হবে। এইভাবে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালিয়ে গিয়ে কোনো বিচার ছাড়া তারা রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে, তা জনগণ গ্রহণ করবে না।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘আমরা যেমন ১৯৭১ সালের হত্যার বিচার চেয়েছি, যুদ্ধাপরাধের বিচার চেয়েছি, তেমনি জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডেরও বিচার চাই। সেই বিচারের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ ঠিক হবে। এর মধ্যেই নির্বাচন, সংস্কারপ্রক্রিয়ায় এগিয়ে নিতে হবে। দ্রুত রোডম্যাপ করা দরকার। সংস্কারপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে এটি সরকারকে সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। নির্বাচন ও সংস্কার কোনো বিরোধী ব্যাপার নয়। কৃত্রিমভাবে নির্বাচন ও সংস্কারকে একটি বিরোধের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মনে হচ্ছে একদল সংস্কার চায় নির্বাচন চায় না, আরেক দল নির্বাচন চায় সংস্কার চায় না। অথচ আমাদের অঙ্গিকার দুটোই ছিল। নির্বাচনের জন্যই সংস্কার দরকার। সংস্কার পূর্ণ করতেও নির্বাচন দরকার। নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়ে মানুষ সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায়। কাজেই সেই রোডম্যাপ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করবে। জনগণ ঠিক করবে কাকে আগামী সংসদে পাঠাবেন।’

গণসংহতি আন্দোলন ময়মনসিংহের আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব এ আর এম মুসাদ্দিক আসিফের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হোসেন, বাংলাদেশ কৃষক মজুর সংহতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম, জাতীয় পরিষদ সদস্য অমিত হাসান, নাগরিক ঐক্য ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্যসচিব হাতেম রানা, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রোকনুজ্জামান সরকার, ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ, মহানগর সুজনের সম্পাদক আলী ইউসুফ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রাহাত জাহান প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের সমালোচনা করেন জোনায়েদ সাকি। কোনো স্বৈরাচারী সরকার সম্পদ লুট না করে থাকতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সবাই সম্পদ লুট করেছে। কী পরিমাণ সম্পদ লুট করা যায়, সেটা আমরা গত ১৫ বছরে দেখলাম। শ্বেতপত্র করার কমিশন গঠন করা হয়েছিল, সেখানে উঠে আসে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার এই দেশ থেকে লুট হয়ে পাচার হয়েছে।’

গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সময় গণ–অভ্যুত্থানের ‘ক্রেডিট’ নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এর সঙ্গে আমরা ১৯৭২ সালের প্রবণতা খুঁজে পাই। পুরো মুক্তিযুদ্ধকে একটি দল দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তার পরিণতিও গত ৫৪ বছরে আমরা দেখেছি। এই ধরনের চেষ্টার মধ্যে গণতান্ত্রিক পথ নেই। গণতান্ত্রিক পথ হচ্ছে সবাইকে নিয়েই এগিয়ে যাওয়ার কাজটা করা।’

৫ আগস্টের পরেও বিভাজন তৈরির খেলা চলছে জানিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘নানাভাবে লেভেল আঁকা হচ্ছে, ট্যাগিং করা হচ্ছে। বিশেষভাবে ট্যাগিং করে বিভাজন সৃষ্টির যে রূপ আজ ধারণ করেছে, তা পুরোনো ফ্যাসিবাদের নানা কায়দাকানুনকে জাগিয়ে তোলার একটা চেষ্টা হিসেবে আমাদের মনে হয়। এসব পরিহার করে আমাদের গণতান্ত্রিক ধারায় যেতে হবে।’