‘এই সাফল্য ধরে রাখতে বেশি করে পড়াশোনা করতে হবে। মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। নেতিবাচক সবকিছু থেকে দূরে থাকতে হবে। ভালো মানুষ হতে হবে।’ এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কথাগুলো বলছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা নাজমীন। আজ শনিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে আয়োজিত শিখো-প্রথম আলো কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলেন তিনি।
সকাল নয়টায় অনুষ্ঠান শুরুর কথা থাকলেও সকাল সাড়ে আটটা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে আসতে শুরু করে নিবন্ধন করা শিক্ষার্থীরা। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া এসব শিক্ষার্থীর কেউ এসেছে মা-বাবার সঙ্গে, কেউ আবার ভাই–বোনকে সঙ্গে নিয়ে, কোথাও কোথাও আবার বন্ধুদের দলের দেখা মিলেছে। সবার সরব উপস্থিতিতে কলেজ প্রাঙ্গণ একটি মিলনমেলায় পরিণত হয়। এ উৎসবে অংশ নিতে অনলাইনে নিবন্ধন করেছে জিপিএ-৫ পাওয়া প্রায় ৬৯২ শিক্ষার্থী।
‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানে সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’-এর পৃষ্ঠপোষকতায় হচ্ছে জিপিএ-৫ উৎসব।
সকাল নয়টায় নির্ধারিত স্টলে সারবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ক্রেস্ট, স্ন্যাকস ও উপহার সংগ্রহের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্ব। জাতীয় সংগীতে বন্ধুসভার সদস্যদের সঙ্গে গলা মেলান অতিথি ও শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য অতিথিদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যের পাশাপাশি ছিল বন্ধুসভার সদস্যদের সাংস্কৃতিক বিভিন্ন পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ জেড এম আরিফ হোসেন ও উপাধ্যক্ষ হামজা মাহমুদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বন্ধুসভার উপদেষ্টা চিকিৎসক আবু সাঈদ, প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী। তিন ‘ম’–কে (মাদক, মুখস্থ, মিথ্যা) ‘না’ জানিয়ে শিক্ষার্থীদের শপথ বাক্য পড়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনাটেড কলেজের পরিচালক শাহীন মৃধা।
উৎসবে কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০ জন গুণী শিক্ষককে সম্মাননা জানানো হয়।
অধ্যক্ষ এ জেড এম আরিফ হোসেন ও উপাধ্যক্ষ হামজা মাহমুদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘যেতে হবে অনেক দূর। মানবিক গুণের অধিকারী হতে হবে। সেই সঙ্গে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। উন্নত মানুষ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে মাত্র।’
চিকিৎসক আবু সাঈদ বলেন, ‘তোমরা আগামী দিনে দেশ ও জাতির কর্ণধার। সব নেতিবাচক বিষয় থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে হবে। আমাদের জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে হবে।’
উৎসবে কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০ জন গুণী শিক্ষককে সম্মাননা জানানো হয়। তাঁদের মধ্যে ৯ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা নাজমীন, সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বদিউজ্জামান ও একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এস এম সোহেল, নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সহিদুল ইসলাম, আশুতোষ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম, উজানচর কে এন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন চন্দ্র সূত্রধর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম, অষ্টগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান ও গভ. মডেল গার্লস হাইস্কুলের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী শফিকুল ইসলাম।
কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে জান্নাত আরা, আদর রহমান, ওয়াসিম আহমেদ, সাদিয়া সাবাহ ও সাদিয়া আফরিন বলেন, এই সংবর্ধনা তাদের সামনে ভালো ফলাফল করতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। শিক্ষক, অভিভাবকদের পাশাপাশি আয়োজকদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানায় তারা।
কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আঁচল সরকার, জান্নাত আরা, প্রিয়ম আচার্য গান এবং উম্মে হাবিবা, রিম সরকার ও সানিয়া আক্তার কবিতা আবৃত্তি করে। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন সৈয়দ তৌফিকুল ইসলাম ও বন্ধুসভার সদস্য আনিশা ইসলাম। হুসাইন ইসলাম ও মিথিলা মজুমদার নৃত্য পরিবেশ করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার মো. শাহাজাহান, সবুজ মোল্লা, করবী চৌধুরী ও নাজরীন।