মাদারীপুরে ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে ভোক্তা অধিকারে এবার সর্বোচ্চ ৫৮টি অভিযোগ
মাদারীপুরে ঈদের আগে ও পরে দূরপাল্লার পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ায় প্রমাণসহ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাদারীপুর কার্যালয়ের অনলাইনে ৫৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এবারই ঈদযাত্রা–সংক্রান্ত সর্বোচ্চসংখ্যক অভিযোগ জমা পড়ল বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর। তবে এখন পর্যন্ত একটি অভিযোগও নিষ্পত্তি করা হয়নি। এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন অভিযোগকারী ব্যক্তিরা।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাদারীপুর কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মাদারীপুর থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে মাদারীপুরগামী যাত্রীর চাপ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এ ছাড়া খুলনা, বরিশাল ও ফরিদপুর জেলা থেকে সরাসরি সড়কপথে দূরপাল্লার বাসে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ থাকে। এ কারণে যাত্রীসেবায় এই সড়কগুলোতে অতিরিক্ত বাস নামানো হয়। প্রতিবছর ঈদে যাত্রীদের একটি সাধারণ অভিযোগ হচ্ছে, ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। বিগত বছরগুলোতে ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে তর্কবিতর্ক থেকে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ একাধিক উদ্যোগ নিলেও এই অনিয়ম ও হয়রানি নিরসন হয়নি।
চলতি বছর পবিত্র ঈদুল ফিতর গত ৩১ মার্চ উদ্যাপিত হয়েছে। তবে মাদারীপুরে দূরপাল্লার পরিবহনগুলো ২৬ মার্চ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া শুরু করে। সাধারণ যাত্রীরা ২৭ মার্চ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানালেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে তাঁরা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাদারীপুর কার্যালয়ের ওয়েবসাইটের নির্ধারিত ফরমে অভিযোগ করেন। ২৭ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৮টি অভিযোগ জমা পড়ে। প্রতিটি অভিযোগের সঙ্গে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার টিকিট ও অন্যান্য প্রমাণ জমা দিয়েছেন আবেদনকারীরা।
যাত্রীরা বলছেন, মাদারীপুর থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ পর্যন্ত বাসভাড়া ৩০০ টাকা। ২৫ মার্চ পর্যন্ত এই সড়কপথে ভাড়া স্বাভাবিক ছিল। তবে ২৬ মার্চ থেকে ঈদযাত্রার কথা বলে অতিরিক্ত ২০০ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দেয় পরিবহন মালিকপক্ষ। ঢাকা থেকে মাদারীপুরগামী অনেক বাসে প্রকৃত ভাড়ার দ্বিগুণ, অর্থাৎ ৬০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি৬ করেন মাদারীপুর শহরের বাসিন্দা মোবারক হোসেন। তিনি পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে প্রতিবছরই মাদারীপুর আসেন। অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে ২৮ মার্চ মাদারীপুরে আসি। বাসের ভাড়া ৩০০ টাকা হলেও ঈদ উপলক্ষে ৫০০ টাকা নিয়েছে। এর প্রতিবাদ করলে বাস থেকে নেমে যেতে বলে। পরে বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়েই ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি আসতে হয়েছে। আবার ঈদ শেষ করে পরিবার নিয়ে ঢাকায় ফেরার পথেও একই রকমভাবে বাড়তি ভাড়া দিতে হয়েছে। অনলাইনে অভিযোগ করেছি, সেখানেও কোনো সাড়া নাই। আমরা ভোক্তারা সারা জীবনই পরিবহন সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি।’
মাদারীপুর থেকে চারটি পরিবহন কোম্পানির কমপক্ষে তিন শতাধিক দূরপাল্লার বাস রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাস রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খানের মালিকানাধীন ‘সার্বিক পরিবহন’-এর। এ ছাড়া ‘চন্দ্র’, ‘সোনালী’ ও ‘মাদারীপুর পরিবহন’ নামে আরও তিনটি কোম্পানির দূরপাল্লার বাস রয়েছে। প্রতিটি বাসেই ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদারীপুর সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতির সভাপতি কে এম তোফাজ্জেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সব সময়ই সঠিক ভাড়া নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। তারপরেও কিছু পরিবহন অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে বলে শুনেছি। ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় অন্যায়। বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। সরকারি দপ্তরে যদি কেউ অভিযোগ দিয়ে থাকে, তাহলে সেটা আইনগত প্রক্রিয়ায় বিচার করা হোক।’
এ সম্পর্কে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাদারীপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (অ. দা.) জান্নাতুল ফেরদাউস প্রথম আলোকে বলেন, ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে অধিদপ্তরে এ বছর সর্বোচ্চসংখ্যক অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। এ জন্য বাসমালিক ও অভিযোগকারী ভোক্তাকে শুনানির জন্য ডাকা হবে। তারপর উভয় পক্ষের শুনানি শেষে অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।