যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরের চুরি যাওয়া স্বর্ণের মুকুট এখনো উদ্ধার হয়নি, মামলাও হয়নি
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার যশোরেশ্বরী কালীমন্দির থেকে চুরি যাওয়া প্রতিমার মাথার স্বর্ণের মুকুটটি এখনো উদ্ধার হয়নি। এ ঘটনায় আজ শুক্রবার বেলা ২টা পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। চুরির ঘটনায় থানায় কোনো মামলাও হয়নি।
শ্যামনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তাইজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মন্দিরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জড়িত ব্যক্তিকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ওই ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। তবে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
২০২১ সালের ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যশোরেশ্বরী কালীমন্দির পরিদর্শনে গিয়ে কালীপ্রতিমার মাথায় স্বর্ণের ওই মুকুটটি পরিয়ে দিয়েছিলেন। মুকুটটি চুরি হয়ে যাওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তারা চোর শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। ধর্মীয় স্পর্শকাতর ঘটনা হওয়ায় অত্যন্ত সতর্কতা ও গুরুত্বসহকারে ঘটনাটির তদন্ত করা হচ্ছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্দিরের মূল অংশটি (কালীপ্রতিমা রাখার স্থান) কলাপসিবল গেট ও তালা দিয়ে আটকানো থাকে। গতকাল দুপুরের দিকে সেখানে অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠান চলছিল। বেলা তিনটার কিছুক্ষণ আগে প্রতিমার মাথায় থাকা স্বর্ণের মুকুটটি চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় মন্দিরের পুরোহিত, তত্ত্বাবধায়কসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। গতকাল বিকেল থেকেই মন্দিরটি তালাবদ্ধ আছে। আজ সেখানে কোনো পূজা হয়নি।
মন্দিরের পুরোহিত দিলীপ কুমার মুখার্জি গতকাল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, বেলা দুইটার দিকে মন্দিরে পূজা শেষ করে তিনি বাড়িতে যান। যাওয়ার কিছুক্ষণ পর মন্দিরের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পরিচ্ছন্নতার জন্য মন্দিরে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর তাঁরা জানান, মন্দিরের ঠাকুরের মাথায় মুকুটটি নেই। তিনি জানিয়েছিলেন, যশোরেশ্বরী মন্দিরটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্র স্থান। এটি সনাতন ধর্মের ৫২ পিটের এক পিট। ২০২১ সালের ২৭ মার্চ নরেন্দ্র মোদি নিজ হাতে কালীপ্রতিমার মাথায় স্বর্ণের ওই মুকুট পরিয়ে দিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে আজ দুপুরে পুরোহিত দিলীপ মুখার্জির মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি। শ্যামনগর উপজেলা হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক অনুপম কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, মুকুট চুরি হয়ে যাওয়ার পর পুরোহিত, তত্ত্বাবধায়কসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁরা এখনো সেখানেই আছেন, এ জন্য ফোন ধরছেন না। তিনি বলেন, ‘মন্দিরটি সার্বজনীন নয়। এ জন্য সেখানে কোনো কমিটিও নেই। দুজন ব্যক্তি মন্দিরটিকে প্রায় পারিবারিক মন্দির হিসেবে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। কমিটি না থাকায় মামলার বিষয়টি হয়তো দেরি হচ্ছে। গতকাল বিকেল থেকেই মন্দিরটি তালাবদ্ধ আছে। আজ সেখানে কোনো পূজা হয়নি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, মন্দিরের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ঘটনার সময় মন্দিরের ফটকে তালা দেওয়া ছিল না। সেই সুযোগে ৩০–৩২ বছর বয়সের সাদা গেঞ্জি পরিহিত এক যুবক মুকুটটি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন। ফুটেজটি স্থানীয় লোকজনকে দেখানো হয়েছে। কিন্তু কেউ তাঁকে শনাক্ত করতে পারছেন না। খুব দ্রুতই তাঁকে আটক করতে সক্ষম হবেন বলে তাঁরা আশাবাদী।
স্থানীয় ঈশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জি এম শোকর আলী বলেন, মুকুট চুরি করা যুবক তাঁদের এলাকার নন। বিভিন্ন এলাকার মানুষকে ভিডিও দেখানো হলেও কেউ চিনতে পারছেন না। ওই যুবককে দুই-তিন দিন ধরে অনেকেই মন্দিরের আশপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন।