ঘূর্ণিঝড় রিমালে মৃত্যু ৪২ হাজার গবাদিপশুর

ফাইল ছবি

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ভোলায় ৪২ হাজার ৩১৭টি (চারণভূমি ও খামার মিলিয়ে) গরু, ছাগল, হাঁস ও মুরগি মারা গেছে। এতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের প্রায় ৮ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিস্তীর্ণ চারণভূমির ঘাস, খামারিদের দানাদার খাবার ও খড় নষ্ট হয়ে গেছে। ঘাস ও সুপেয় পানির সংকট রয়েছে।

চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নের মো. মামুন হাজারী বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল আঘাত হানার প্রায় ৯ দিন পরও এলাকায় সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। তাঁরা পান করবেন কী আর গরুকে কী দেবেন? লবণপানি পান করায় তাঁর একটি মহিষ মারা গেছে। ৮ জুন বিকেলে দেখেন মহিষটির পেট ফুলে গেছে। পরদিন চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে এসে দেখেন মহিষটি মারা গেছে।

মামুন আরও বলেন, ঝড়ের সময়েও তাঁর একটি বড় মহিষ ও একটি বাছুর মারা যায়। সব মিলিয়ে তাঁর প্রায় তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। লবণপানি খেয়ে ঢালচর ইউনিয়নের আরও কিছু গবাদিপশু মারা গেছে।

আবদুস সালাম বলেন, ঝড়ের সময় তাঁর ১৩টি গরুর মধ্যে ৩টি ভেসে গেছে। দুটি গরুর মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছেন, অন্যটি এখনো পাননি। জহিরুল ইসলামের দুটি মহিষ, তিনটি গরু, চারটি ছাগল ও ছয়টি ভেড়া ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে তাঁর প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মো. হাসান ফরাজি বলেন, রিমালের কারণে তাঁর গরুগুলো দীর্ঘক্ষণ পানির মধ্যে ছিল। পরে ঠান্ডা লেগে দুটি মহিষ মারা গেছে। এতে তাঁর দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার বলেন, ইউনিয়নের দেড় হাজার পরিবারের প্রায় সাড়ে তিন হাজার গবাদিপশু ভেসে গেছে। কিন্তু তিনি এ খাতে কোনো বরাদ্দ কিংবা চিকিৎসা-সহায়তা পাননি।

ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আলমগীর গোলদার বলেন, স্রোতে তাঁর দুটি গরু ভেসে যায়। একটি গরু অনেক দূরে জীবিত পেয়েছেন। আরেকটির মৃতদেহ পেয়েছেন। তাঁর খামারের ৯৩টি হাঁস মারা গেছে।

দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউপির সদস্য ফারুক দৌলত বলেন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় তাঁদের ইউনিয়নের ১০টি গবাদিপশু মারা গেছে। এখানে গবাদিপশুর খাদ্যসংকট দেখা দিলেও কোনো বরাদ্দ পাননি।

গবাদিপশুর মালিকেরা জানান, জেলার ৭৪টি চরাঞ্চলে কয়েক লাখ গবাদিপশু লালনপালন করা হলেও পর্যাপ্ত কিল্লা ও মিঠাপানির ব্যবস্থা নেই। ঝড়ের পর ঘাসের সংকটও দেখা দিয়েছে। আবার ঘরে থাকা গোখাদ্য ভেসে গেছে পানিতে। ফলে গবাদিপশুকে ভালোভাবে খেতে দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় খুরা, বাদলা, গলা ফোলাসহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না।

ভোলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে বিভিন্ন খামারের ৪ হাজার ৯৩৪টি গরু, ৬ হাজার ৪৮০টি মহিষ, ২ হাজার ৬৬৬টি ভেড়া, ৫ হাজার ৬৫৬টি ছাগল, ১৫ হাজার হাঁস ও ৩ হাজার মুরগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া চারণভূমির আরও ১৬ হাজার ১১০টি গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি মারা গেছে। ২ হাজার ১৪১ হেক্টর চারণভূমি প্লাবিত হয়েছে। ৭৮টি খামারের ৭৮ মেট্রিক টন দানাদার খাদ্য, ৩৮২ মেট্রিক টন খড় ও ৭৫৩ মেট্রিক টন ঘাস নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৫ হাজার মানুষের প্রায় ৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সরাসরি কোনো বরাদ্দ পায়নি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ এলে পাবেন জেলা প্রশাসক। আর প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এলে তাঁরা পাবেন। তবে ভোলায় কর্মরত প্রাণী চিকিৎসকেরা সেবা দিচ্ছেন। তাঁরা এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৩৮০টি গবাদিপশুকে চিকিৎসা দিয়েছেন।