সাতক্ষীরায় বিএনপি নেতা হত্যার ১১ বছর পর মামলা, সাবেক এমপি, এসপিসহ আসামি ২২

মামলা
প্রতীকী ছবি

সাতক্ষীরার তালা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জালালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম বিপ্লব কবীরকে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যার অভিযোগে প্রায় ১১ বছর পর মামলা করা হয়েছে।

সাতক্ষীরার আমলি আদালত-৩–এ রোববার মামলাটি করেন বিপ্লব কবীরের বড় ভাই মো. জাহাঙ্গীর আলম (৫০)। এ মামলায় সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহিদুল হাসান মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ২৩ মার্চের মধ্যে এজাহার হিসেবে গণ্য করে আদালতকে অবগত করতে তালা থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু সাঈদ।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাতক্ষীরা পুলিশের গোয়েদা শাখার সাবেক ওসি (ডিবি) এ কে এম আজমল হুদা, ডিবি পুলিশের কনস্টেবল হাসিবুর রহমান, ফারুক চৌধুরী, রাসেল মাহমুদ, শিকদার মনিরুজ্জামান, তালা থানার সাবেক ওসি আবু বকর সিদ্দিক, উপপরিদর্শক আকরাম হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক গোলাম সরোয়ার, জালালপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম, মাঝিয়াড়া গ্রামের যুবলীগ নেতা শেখ আবু জাফর, দোহার গ্রামের যুবলীগ নেতা শাহিন শেখ, জালালপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আমিরুল শেখ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী রুহুল আমিন শেখ, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আমজাদ আলী, যুবলীগ নেতা ইদ্রিস সরদার, আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল সরদার, যুবলীগ নেতা আক্তারুল সরদার, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মহিবুল্লাহ মোড়ল, উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শেখ আনারুল ইসলাম ও জালালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রামপ্রসাদ দাশ।

মামলার বিবরণে জানা যায়, তালা শালিখা ডিগ্রি কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক ও বিএনপি নেতা বিপ্লব কবীরের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আসামিরা তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। একপর্যায়ে বিপ্লব বিষয়টি জানতে পেরে রাতে নিজ বাড়িতে না থেকে মামলার ১ নম্বর সাক্ষী ছবেদ আলী মোড়লের বাড়িতে লুকিয়ে থাকতেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিষয়টি জানার পর ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই রাত ১২টার দিকে আসামিরা সংঘবদ্ধ হয়ে পিস্তল, কাটা রাইফেল, বন্দুক, রামদা, চায়নিজ কুড়াল, রডসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ১ নম্বর সাক্ষী ছবেদ আলী মোড়লের বাড়ি ঘিরে ফেলেন।

একপর্যায়ে তাঁরা ছবেদ আলীর ঘরের দরজা ভাঙার চেষ্টা করলে তিনি বাধা দেন। বাধা দেওয়ায় তাঁর হাতের কনুইতে মামলার ১৩ নম্বর আসামি শাহীন শেখ গুলি করেন। এ সময় অন্য আসামিরা লোহার রড ও রামদা দিয়ে তাঁর দুই পা ভেঙে দেন। এতে তাঁর স্ত্রী রিজিয়া বাধা দিতে এলে আসামিরা তাঁকেও মারধর করেন।

মামলার আবেদনে আরও বলা হয়, ছবেদ আলীর ঘরের দরজা ভেঙে আসামিরা বিপ্লবকে জোরপূর্বক টেনেহিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসেন। পরে তাঁরা রড দিয়ে তাঁর মাথার পেছনে বাড়ি মারলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। লুটিয়ে পড়ার পর আসামিরা তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন এবং ডান পায়ে কাটা রাইফেল দিয়ে তিনটি গুলি করেন। এ সময় আসামিরা ছবেদ আলীর বাড়ি ভাঙচুর ও লুটতরাজ করেন। এতে তাঁর ছয় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়। সেখানে উপস্থিত এসপি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরের নির্দেশে পুলিশের গাড়িতে বিপ্লবকে তুলে নিয়ে ইসলামকাটির দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, বিপ্লব কবীরকে নিয়ে যাওয়ার সময় বাদী জাহাঙ্গীর আলম, অপর সাক্ষী আশরাফুল, মশিয়ার ও আমিরুল দুটি মোটরসাইকেলে করে পুলিশের গাড়ির গতিবিধি লক্ষ করে যেতে থাকেন। রাত দুইটার দিকে ইসলামকাটি সেতুসংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে তাঁরা দেখেন সেখানে পুলিশের দুটি গাড়ি অবস্থান করছে। একটি গাড়ি থেকে বিপ্লবের চোখ বেঁধে নিচে নামানো হয়। এর পরপর তাঁরা দুটি গুলির শব্দ পান। তখন বাদী বুঝতে পারেন, তাঁর ভাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত করে গাড়িতে করে তাঁর ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে যায় পুলিশ। পরে বাদীসহ এ মামলার সাক্ষী আশরাফুল, মশিয়ার ও আমিরুল মোটরসাইকেলে করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখেন সেখানে বিপ্লব কবীরের মরদেহ পড়ে রয়েছে। পরে পুলিশ তাঁর মরদেহ ময়নাতদন্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। মরদেহ হস্তান্তরের পর তৎকালীন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর এ মামলার বাদীসহ তাঁর পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন। মারধরে আহত ছবেদ আলী মোড়লের স্ত্রীও কিছুদিন পর মারা যান।