কোথাও তিনটি জবা, কোথাও দুটি বাগানবিলাস ও একটি গোলাপ
রাজশাহী নগরের কুমারপাড়ায় অবস্থিত মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় এখন ধ্বংসস্তূপ। কার্যালয়ের পূর্ব পাশে জাতীয় চার নেতার ফলকের মাঝখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ছিল। ৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিটি তুলে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে প্রতিকৃতির বেদিতে তিনটি জবা ফুল পাওয়া গেছে। তিনটি ফুলের একটি বেদির নিচে পড়ে আছে।
কুমারপাড়া এলাকায় সকাল ১০টা থেকে ভ্যানে কাপড় বিক্রি করছেন এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, তিনি এসে দেখেছেন এই তিনটি ফুল ঠিক এভাবে পড়ে আছে। হয়তো ভোরে বা রাতে কেউ রেখে গেছেন।
১৯৭৫ সালের এই দিনে এক দল বিপথগামী সেনাসদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে সপরিবার হত্যা করে। সরকারে আওয়ামী লীগ থাকাকালে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করত। সচরাচর এই দিনে ভোর থেকেই রাজশাহীর মোড়ে মোড়ে, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বারবার মাইকে বাজানো হতো। দলীয় নেতা-কর্মীসহ অন্যরা কালো ব্যাজ ধারণ করতেন। নগরের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর এসব ম্যুরাল ভরে থাকত ফুলে ফুলে। কিন্তু এবার যেমন বেদিতে ফুল পড়েনি, তেমনই বাজেনি বঙ্গবন্ধুর কোনো ভাষণও।
রাজশাহী কলেজের ফটক দিয়ে প্রবেশের পরই সামনে পড়ে বঙ্গবন্ধুর আরেকটি ম্যুরাল। ৫ আগস্ট বিকেলে এটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেদিন বুলডোজার দিয়ে এটি ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছিল। ম্যুরালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিজুড়ে ক্ষত চিহ্ন। এই ম্যুরালের বেদিতে পাতাযুক্ত দুটি বাগানবিলাস ও একটি গোলাপ ফুল পড়ে থাকতে দেখা গেল।
ওই ম্যুরালের পাশে কয়েকজন শিক্ষার্থী বসে ছিলেন। ম্যুরালে ফুলের বিষয়ে তাঁদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা কিছু বললেন না। কলেজ ফটকে থাকা নিরাপত্তাকর্মী বললেন, তিনি কাউকে সেখানে ফুল দিতে দেখেননি। তবে ফুলগুলো কলেজেরই।
নগরের সিঅ্যান্ডবি মোড়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরের পাশে স্থাপিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বিশাল ম্যুরাল। ৫ আগস্ট এর কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরে ৭ আগস্ট রাতে ম্যুরালটি ভেঙে ফেলতে বুলডোজার এনেছিলেন এক দল তরুণ। পরে স্থানীয় লোকজনের বাধায় ভাঙতে না পেরে মুখে কালি মাখিয়ে চলে যান তাঁরা। ম্যুরালের চারপাশে রয়েছে লোহার সীমানাপ্রাচীর। আজ দুপুরে সেখানে গিয়ে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। ম্যুরালে কোনো ফুলও পড়েনি। তবে লোহার রেলিংয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের ছবি। তাঁদের স্মরণ করে ব্যানার টানিয়েছে রাজশাহী মহানগর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
এখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর কথা হয় স্থানীয় এক তরুণের সঙ্গে। তিনি জানান, গত বছর এখানে এসে তিনি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। এবার এটা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আর শ্রদ্ধা জানানোর পরিবেশও নেই। তাঁর উপলব্ধি শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুকে সবার করতে পারেননি।
রাজশাহীর শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতা থেকে শুরু করে কোনো কর্মীকেও আজ মাঠে দেখা যায়নি। যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে নেতাদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৭৫ সালের পর একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর যে আদর্শ ছিল, সেই আদর্শ ধারণ করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। তারা লুটপাট নিয়েই ব্যস্ত ছিল। তাদের অহংকার ও অহমিকার কারণে মানুষের মনে তারা আসতে পারেনি। এ কারণে আজকে সংকটে কোনো নেতাই মাঠে নেই। তাঁরা আসতেও সাহস পাচ্ছেন না।