শারীরিক প্রতিবন্ধী ওয়াতুই রাম ত্রিপুরার পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী-সন্তানসহ আট সদস্য। নিজ ভিটায় গড়ে তোলা একটি ইকো রিসোর্টের আয় দিয়ে চলছিল তাঁর সংসার। দ্বিতল রিসোর্টটির নিচতলায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজে থাকতেন। পর্যটকদের ভাড়া দিতেন দোতলার চারটি কক্ষ। গত সোমবার আগুনে পুড়ে যায় ওয়াতুই রাম ত্রিপুরার রিসোর্টটি।
তরুছায়া নামে ওয়াতুই রাম ত্রিপুরার রিসোর্টটি অবস্থিত রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে। সোমবার আগুন লেগে এই পর্যটনকেন্দ্রের ৩৪টি রিসোর্ট, ৩৫টি বসতবাড়ি, ২০টি দোকান ও ৭টি রেস্তোরাঁ পুড়ে যায়।
আগুনে যাঁরা বসতঘর হারিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় গির্জা-মন্দিরে। কেউ কেউ রয়েছেন স্বজনদের ঘরবাড়িতে। তবে ওয়াতুই রাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পড়ে আছেন নিজ ভিটায়। পুড়ে যাওয়া রিসোর্টের কিছু ঢেউটিন দিয়ে গড়ে তুলেছেন ১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬ ফুট প্রস্থের একটি খুপরি। সেখানেই গাদাগাদি করে থাকছেন পরিবারের আট সদস্য।
আজ বুধবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, খুপরির ভেতরে বসে রয়েছেন ওয়াতুই রাম। চারপাশে পোড়া ছাই ছড়িয়ে আছে। পরিবারের সদস্যরা বলেন, শৈশবে গাছ থেকে পড়ে এক হাত ভেঙে যায় ওয়াতুই রামের। তা ছাড়া কিছুটা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তিনি।
ওয়াতুই রাম ত্রিপুরা বলেন, নিজেদের থাকা আর আয়ের একমাত্র সম্বল ছিল রিসোর্টটি। আগুনে পুড়ে এখন কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। বাঁশ-খুঁটির মাচা কয়েকটি ঢেউটিন দিয়ে ঘিরে কোনোমতে পরিবারের সদস্যরা রাত যাপন করছেন।
এখন সরকারি-বেসরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানান ওয়াতুই রাম ত্রিপুরা। তিনি বলেন, আজ সকালে উপজেলা প্রশাসন থেকে তিনিসহ ৩৫টি পরিবারকে একটি করে কম্বল, ৭ হাজার টাকা, ৩০ কেজি চাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্য দেওয়া হয়েছে।
রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে আগুন লাগার পর সাজেক ভ্রমণে পর্যটকদের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। তবে গতকাল মঙ্গলবার আবারও পর্যটকদের জন্য পর্যটনকেন্দ্রটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, মঙ্গলবার বিকেল থেকেই পর্যটকেরা আসছেন।
এদিকে আজ দুপুরে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে আগুনের ঘটনায় করা পাঁচ সদস্যের তদন্ত দল। বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ টাকা, চালসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হচ্ছে।