তানোরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত কৃষক দল নেতার মৃত্যু
রাজশাহীর তানোরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত আরেকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাঁর নাম নেকশার আলী (৩৫)। তিনি কৃষক দল নেতা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তিনি মারা যান।
গত ২৭ মার্চ উপজেলায় দলের ইফতার কর্মসূচি শেষে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় আহত হয়েছিলেন নেকশার আলী। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে।
এ ঘটনার ১৭ দিন আগে তানোরে বিএনপির অপর একটি ইফতার কর্মসূচিতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গানিউল ইসলাম নামের এক বিএনপির কর্মী মারা যান। এবারের রোজায় উপজেলাটিতে বিএনপির ইফতার–পরবর্তী সংঘর্ষে দুজন নিহত হলেন।
গতকাল মারা যাওয়া নেকশার আলী তানোরের রাতৈল গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক এবং চান্দুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিনের অনুসারী। ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় মফিজ উদ্দিনের বাড়িতে দলীয়ভাবে ইফতার আয়োজন করা হয়। ইফতারের পর সন্ধ্যায় মফিজ উদ্দিনের অনুসারীদের সঙ্গে ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান সভাপতি আজাদ আলীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা–কর্মী বলেন, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মফিজ উদ্দিন তাঁর বাড়িতে ইফতারের আয়োজন করেন। এতে অংশ নেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিন। ওই ইফতার অনুষ্ঠানের জন্য মফিজ উদ্দিনের অনুসারী লোকজন স্থানীয় রাতৈল বাজারের মুদিদোকানি দুরুল হুদার কাছে চাঁদা চেয়েছিলেন। চাঁদা না দেওয়ার কারণে ইফতারের পর ওই দোকানে হামলা হয়। এ সময় আজাদ আলীর অনুসারীরা বাধা দিতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষের ৯ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে একজন মফিজ উদ্দিনের অনুসারী নেকশার আলী।
তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফজাল হোসেন বলেন, মারামারির ঘটনার পর দুই পক্ষই থানায় দুটি মামলা করেছিল। এক পক্ষের একজন গতকাল বিকেলে মারা গেছেন। আগে করা মারামারির মামলাটিই হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে।আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে। নেকশার আলী হত্যা মামলাটির বাদী রাতৈল গ্রামের নওসেরাজ শেখ নামের এক ব্যক্তি। গতকাল রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।
এর আগে ১১ মার্চ তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়নে বিএনপির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই ইফতারে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিন। আর প্রধান বক্তা ছিলেন সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমান। সেদিন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোমিনুল হকের অনুসারীরা প্রধান অতিথিকে বরণ করতে চাইলে বাধা দেন বর্তমান সভাপতি মুজিবুর রহমানের অনুসারীরা। ইফতারের পর দুই পক্ষের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এতে মোমিনুল হকের ছোট ভাই গানিউল ইসলাম আহত হন। পরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় বিএনপির ৩৭ নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়।
এর জেরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমান এবং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মুজিবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। জেলা বিএনপি থেকে তানোরে ইফতার অনুষ্ঠান আয়োজন না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তারপরও মফিজ উদ্দিনের বাড়িতে ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে তানোরে দলের আরেকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।