বাংলাদেশ ও ভারতে একই সময়ে ইলিশ মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার দাবি জেলেদের

বরিশালে আজ বুধবার বিকেলে ‘জলবায়ু বিপদাপন্ন উপকূলীয় জেলে সম্প্রদায়ের সরকারি সুরক্ষা সেবায় প্রবেশাধিকার ও চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে একটি সেমিনার হয়ছবি: প্রথম আলো

একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের প্রজনন ও উৎপাদন, অন্যদিকে বহুদিন ধরে চলে আসছে নদী দখল-দূষণ আর মৎস্য ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা। নিষিদ্ধ মৌসুমে ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরা ও নিষিদ্ধ জালে পোনা-জাটকা শিকার চলে সারা বছর। সব মিলিয়ে ইলিশের দেশে এখন ইলিশের আকাল। জেলেদের জালে মিলছে না ইলিশ কিংবা অন্য মাছ। যা–ওবা মেলে, তা নিয়ে শুরু হয় অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কাড়াকাড়ি ও কারসাজি। তাঁদের জালের মতো বিস্তৃত চোরা দাদনের ফাঁদে জিম্মি হয়ে আছেন উপকূলের লাখ লাখ জেলে।

আজ বুধবার দুপুরে বরিশালে নগরের বান্দরোডের একটি রেস্তোরাঁয় ‘জলবায়ু বিপদাপন্ন উপকূলীয় জেলে সম্প্রদায়ের সরকারি সুরক্ষা সেবায় প্রবেশাধিকার ও চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক এক সেমিনারে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। সেমিনারের আয়োজন করেছে বেসরকারি সংস্থা আইসিডিএ।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইসিডিএর উপদেষ্টা আনোয়ার জাহিদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার, জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মেহেরুন নাহার, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস, উন্নয়ন সংগঠক শুভংকর চক্রবর্তী, সিটিজেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ফিরোজ, সাংবাদিক সুশান্ত ঘোষ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন জেলে ও জেলেদের প্রতিনিধিও বক্তব্য দেন।

বক্তারা বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞার সময়ে যে সহায়তা জেলেদের জন্য দেওয়া হয় তাতেও ভাগ বসান জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রভাবশালী কিংবা জেলে নন এমন ব্যক্তিরা। ফলে যুগ যুগ ধরে জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরলেও তাঁদের ভাগ্যের চাকা ঘোরে না, সচ্ছলতা ফেরে না। বছরে ৩৬৫ দিনের ১৫৮ দিন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর সরকারি প্রয়াস থাকলেও সাগরে এসে মাছ ধরে নিয়ে যান ভিনদেশি জেলেরা। এতে দেশীয় জেলেরা আরও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এই অব্যবস্থাপনা ভাঙতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যুগোপযোগী উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশের সাগরের জলসীমায় মাছের প্রজনন বাড়াতে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা এবং ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ভারতের জলসীমায় কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকে না। এই সুযোগে ভারতের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমা থেকে অবাধে মাছ ধরে নিয়ে যান—এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলেরা বলেন, ‘আমরা পেটে পাথর বেঁধে এই নিষেধাজ্ঞা পালন করি। আর ভারতের জেলেরা তখন আমাদের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যায়। আমরা দুই দেশের নিষেধাজ্ঞা একই সময়ে দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে দাবি জানালেও বিগত সরকার তাতে ভ্রুক্ষেপ করেনি।’

বরিশাল সদরের টঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের জেলে ইয়াকুব আলী মোল্লা বলেন, ‘আমরা যে সময় নদীতে জাল ফেলা বন্ধ করি, সে সময় অন্য দেশের জেলেরা আমাদের সীমানায় মাছ ধরতে আসে। এটি বন্ধ করতে একই সময়ে মাছ ধরা বন্ধের সময়সীমা ঘোষণা করতে উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে আমরা মারা যাব।’

জেলেদের এই ক্ষোভের বিষয়টির যৌক্তিকতা স্বীকার করেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ। সেমিনারে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, বিষয়টি বর্তমান সরকার অনুধাবন করতে পেরেছে। এ জন্য দুই দেশে যাতে একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা থাকে, সেটি নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে মৎস্য উপদেষ্টা এ বিষয়ে মৎস্য কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।