দল বেঁধে সাগরে নেমে গেল ১২০টি কাছিমছানা
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের সড়কের পশ্চিম পাশে নির্জন প্যাঁচারদ্বীপ সৈকত। তিন মাস আগে এই সৈকতে অলিভ রিডলে (জলপাই রঙের) প্রজাতির দুটি সামুদ্রিক কাছিম পেড়েছিল ১২৯টি ডিম। ডিমগুলো বালুচর থেকে সংগ্রহ করে হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টে (নেকম) স্বেচ্ছাসেবীরা। গত বুধবার ডিম থেকে জন্ম নেয় ১২০টি কাছিমছানা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে দুই দিন বয়সী ছানাগুলো সাগরে অবমুক্ত করা হয়।
মাত্র ১৫ মিনিটের মাথায় কাছিমছানাগুলো দল বেঁধে নেমে যায় সাগরে। হিমছড়ি সহব্যবস্থাপনা কমিটির সহযোগিতায় কাছিমছানা অবমুক্তকরণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হাবিবুল হক, নেকমের প্রাকৃতিক সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাপক মো. আবদুল কাইয়ুম, বিট কর্মকর্তা তানভির আহমেদ প্রমুখ।
গত চার বছরে নেকমের স্বেচ্ছাসেবীরা সৈকত থেকে ৪০ হাজার ৪৫০টি ডিম সংগ্রহ করে হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করেন বলে জানা যায়। যার মধ্যে ৮৫ শতাংশ ডিম থেকে বাচ্চা ফুটেছে, যা পরে সাগরে অবমুক্ত করা হয়। নেকমের কর্মীরা জানান, গত ১ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংস্থার কর্মীরা সৈকত থেকে ৭৫টির বেশি কাছিমের ৮ হাজারের বেশি ডিম সংগ্রহ করেছেন। সব কটি অলিভ রিডলে প্রজাতির। এর মধ্যে প্রথম দফায় হ্যাচারিতে ২টি কাছিমের ডিম থেকে ১২০টি ছানা জন্ম নিয়েছে। আগামী কয়েক দিনে আরও কয়েক শ ছানার জন্ম হতে পারে। ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে কক্সবাজার সৈকতে মা কাছিমের ডিম পাড়া শুরু হয়।
নেকমের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাপক মো. আবদুল কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, সমুদ্রের ময়লা-আবর্জনা ও আগাছা পরিষ্কার এবং জেলিফিশ খেয়ে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য বজায় রাখতে অনন্য ভূমিকা রাখে কাছিম। গভীর সমুদ্রের হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মা কাছিম ডিম পাড়তে ছুটে আসে কক্সবাজার উপকূলে। এ সময় সাগরে পুঁতে রাখা নিষিদ্ধ জালে আটকা পড়ে অনেক কাছিম মারা যায়। এখন মা কাছিম সৈকতের ৩৪টি পয়েন্টে ডিম পাড়ার সুযোগ পাচ্ছে। এক দশক আগে এমন পয়েন্ট ছিল ৫২টি।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, ১ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ২৩০টির বেশি মরা কাছিম ভেসে আসে। কাছিমগুলোর মৃত্যু না হলে আরও ৩০ হাজার ডিম পাওয়া যেত।