সৌদির সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আজ ঈদ উদ্যাপিত হচ্ছে
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আজ রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হচ্ছে। উৎসবমুখর পরিবেশে সকাল থেকে মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে দেশ ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় মোনাজাত করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এসব এলাকার মানুষেরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ উদ্যাপন করে আসছেন।
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুরেশ্বরী দরবার শরিফের ১২টি গ্রামের ভক্তরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করছেন। আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দশধরী ও ধর্মপাশা উত্তরপাড়া গ্রামে খানকায়ে সুরেশ্বরী দরবার শরিফের কক্ষে একই সময়ে ঈদুল ফিতরের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামগুলো হলো দশধরী, ধর্মপাশা উত্তরপাড়া, সৈয়দপুর, রাধানগর, কান্দাপাড়া, গাছতলা, জামালপুর, রাজনগর, মেউহারী, বাহুটিয়াকান্দা, মগুয়ারচর ও মহদীপুর।
ধর্মপাশা উত্তরপাড়া খানকা শরিফের কক্ষে ঈদের নামাজ পড়ান ওই খানকার খতিব মাওলানা রিফাত নূরী আল মুজাদ্দেদী। অপর দিকে দশধরী খানকা শরিফের কক্ষে ঈদের নামাজ পড়ান ওই খানকার খতিব মো. পলাশ মিয়া। মো. পলাশ মিয়া বলেন, ২৮ বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে উপজেলার দশধরী গ্রামের খানকা শরিফে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের ছয় গ্রামের আট শতাধিক পরিবার ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করছে। সকাল সাড়ে ৯টায় সাপলেজা ইউনিয়নের ভাইজোড়া গ্রামের খোন্দকার বাড়ি ও ৯টায় কচুবাড়িয়া গ্রামের হাজি ওয়াহেদ আলী হাওলাদার বাড়িতে ঈদের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মোহাম্মদ হাজি আমির আলী মুন্সী ও মাওলানা আলী হায়দার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বরের পীর মরহুম হজরত মাওলানা জান শরিফ ওরফে শাহে আহম্মদ আলীর অনুসারী হিসেবে উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের পূর্ব সাপলেজা, ভাইজোড়া, কচুবাড়িয়া, খেতাছিড়া, বাদুরতলী ও চড়কগাছিয়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদ্যাপন করে আসছেন। সুরেশ্বর পীরের অনুসারী মিরাজ খন্দকার বলেন, ‘আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রেখেছি এবং আজ সৌদি আরবের সঙ্গেই ঈদ উদ্যাপন করছি।’
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করা হচ্ছে। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জেলার সহিহ্ হাদিস সম্প্রদায়ের মুসল্লিরা পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা গ্রামের মধ্যপাড়ায় নামাজ আদায় করেন। ঈদের নামাজে ইমামতি ও খুতবা পাঠ করেন হাফেজ মোহাম্মদ ওমর ফারুক।
সকাল থেকেই পার্শ্ববর্তী সদর, পলাশবাড়ী ও সাদুল্ল্যাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হেঁটে, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল নিয়ে তালুক ঘোড়াবান্ধা মধ্যপাড়ায় আসেন। পরে তাঁরা স্থানীয় একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে নামাজ আদায় করেন।
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দক্ষিণ বলারদিয়া মধ্যপাড়া মাস্টারবাড়ি জামে মসজিদ ঈদগাহ মাঠে ১৩টি গ্রামের মানুষ ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। ইমামতি করেন মাওলানা আজিম উদ্দিন। গ্রামগুলো হলো বলারদিয়ার, মূলবাড়ী, সাতপোয়া, সাঞ্চারপাড়, পঞ্চপীর, পাখাডুবি, বনগ্রাম, বালিয়া, বাউসী, হোসনাবাদ, পাটাবুগা, পুঠিয়ারপাড় ও বগারপাড়। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঈদের জামাতে পুরুষের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করেন নারীরাও।
বলারদিয়ার গ্রামের সবুজ আহাম্মেদ (৩৫) বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ১৬ বছর ধরে আমরা ১৩ গ্রামের মুসল্লিরা একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করে আসছি। প্রতিবছরই ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আমরা ঈদ উদ্যাপন করে থাকি।’
সাতক্ষীরার অন্তত ২০টি গ্রামে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকাল ৮টায় সদর উপজেলার ভাড়ুখালী আহলে সুন্না আল জামাত জামে মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে সাতক্ষীরার বিভিন্ন গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। আমরা বিশ্বাস করি, সারা বিশ্বের মুসলমানদের একসঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করাই উত্তম।’
এ ছাড়া সাতক্ষীরা সদরের বাউখোলা, তালা উপজেলার জেঠুয়া, ইসলামকাঠি, শ্যামনগর উপজেলার গোয়াল চত্বরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে একই সময়ে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার আজ ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করছে। তারা কলাপাড়া উপজেলায় ‘চান টুপি’র লোক হিসেবে পরিচিত। উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের উত্তর নিশানবাড়িয়া জাহাগিরিয়া, শাহ্সূফি মমতাজিয়া দরবার শরিফ প্রাঙ্গণে চান টুপির অনুসারীদের ঈদের নামাজের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামাজের ইমামতি করেছেন হাফেজ মো. এমদাদ আলী।
চাঁদপুরের পাঁচ উপজেলার অর্ধশত গ্রামে আজ ঈদুল ফিতর উদ্যাপন হচ্ছে। হাজীগঞ্জ সাদ্রা দরবার শরিফের অনুসারীরা দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ উদ্যাপন করছেন।
১৯২৮ সাল থেকে হাজীগঞ্জের সাদ্রা দরবার শরিফের মরহুম পীর মাওলানা ইসহাক (রহ.) সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও দুই ঈদ উদ্যাপনের প্রচলন শুরু করেন। তাঁর দেখাদেখি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, শাহরাস্তি, কচুয়া ও মতলব উত্তরের বেশ কিছু গ্রামসহ প্রায় অর্ধশত গ্রামের প্রায় অর্ধলাখ মুসল্লি এভাবে রোজা ও ঈদ করছেন।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ১০ গ্রামের মানুষও সিয়াম সাধনা শেষে ঈদ উদ্যাপন করেছেন। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় শেখর ইউনিয়নের সহস্রাইল দায়রা শরিফে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ৮টা, ৯টা ও সাড়ে ৯টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এসব জামাতে এলাকার অন্তত দুই সহস্রাধিক ব্যক্তি নামাজ আদায় করেছেন।
শেখর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও সহস্রাইল পাবলিক পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইস্রাফিল মোল্লা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি শেখর ও রুপাপাত ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রামের আংশিক মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে আগাম রোজা ও ঈদ উদ্যাপন করেন। এবার শেখর ইউনিয়নের সহস্রাইল দায়রা শরিফ, রাখালতলি, মাইটকুমরা মসজিদসহ ৪টি জামায়াতে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
এ ছাড়া শেরপুরের তিন উপজেলার পাঁচ গ্রামে ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হচ্ছে। এসব গ্রাম হলো শেরপুর সদরের বেতমারী ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়নের চরখারচর মধ্যপাড়া ও চরখারচর উত্তরপাড়া, নকলা পৌরসভার চরকৈয়া, নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী মধ্যপাড়া এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার চতল গ্রাম।
স্থানীয় ও জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে এসব গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নকলার চরকৈয়া গ্রামের খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত নামাজে ওই গ্রামের প্রায় ২০০ মানুষ অংশ নেন।
প্রতিটি জামাতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি এবং বাংলাদেশকে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ করতে আল্লাহর কাছে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। নামাজ শেষে মুসল্লিরা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বেতমারী ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. রেজাউল করিম বলেন, চরখারচর উত্তরপাড়া বদুনী বিলপাড়ে ও চরখারচর মধ্যপাড়া সুরেশ্বর খানকাহ শরীফে ৬০০ মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করেন। এসব গ্রামের মানুষ প্রায় ৫০ বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদ্যাপন করে আসছেন। তাঁরা ফরিদপুরের সুরেশ্বর পীরের অনুসারী।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা ও ফরিদপুর; প্রতিনিধি, গাইবান্ধা, জামালপুর, শেরপুর, ধর্মপাশা, সুনামগঞ্জ ও কলাপাড়া, পটুয়াখালী এবং সংবাদদাতা, পিরোজপুর]