পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের বেড়া স্থাপনে বিজিবির বাধা, নওগাঁয় উত্তেজনা নিরসনে পতাকা বৈঠক

সীমান্ত আইন লঙ্ঘনে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএসএফের বিরুদ্ধে। শুক্রবার বিকেলে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া সীমান্তেছবি: প্রথম আলো

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া সীমান্তে আবারও শূন্যরেখা বরাবর কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনের চেষ্টা চালিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তবে খবর পেয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে বেড়া নির্মাণের প্রতিবাদ জানালে কাজ বন্ধ রাখেন বিএসএফ সদস্যরা। আজ শুক্রবার বিকেলে এ ঘটনার পর সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এদিকে নওগাঁর ধামইরহাট সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় উপজেলার বস্তাবর সীমান্তচৌকি (বিওপি) সংলগ্ন শূন্যরেখায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএসএফের ১২৩ ব্যাটালিয়নের শিবরামপুর কোম্পানির কমান্ডারের সঙ্গে বিজিবির বস্তাবর কোম্পানির কমান্ডারের সঙ্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এ বিষয়ে বিজিবির নওগাঁর পত্নীতলা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কর্নেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, বিজিবি ও বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে সম্মত হয়েছে বিএসএফ। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বা রাস্তা হবে কি না, তা বিজিবি-বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরও বলেন, বিএসএফ বলেছে তারা সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে তারা কোনো বেড়া বা স্থাপনা করবে না। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ১৫০ গজের মধ্যে বেড়া বা স্থাপনা করার চেষ্টা করলে বিজিবি প্রতিহত করবে।

আরও পড়ুন

বিজিবি ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, নওগাঁর বস্তাবর সীমান্তে প্রায় ৬০০ গজের মধ্যে দুই দেশের কোনো বেড়া নেই। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিজিবির সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ভারতীয় সীমান্তে বিএসএফের সদস্য ও কিছু নির্মাণশ্রমিকের কার্যক্রম চোখে পড়ে। ওই এলাকায় তাঁরা গাছপালা কাটছিলেন এবং এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি কাটার কাজ করছিলেন। আইন অনুযায়ী সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে ফসল চাষ ছাড়া সীমান্তবর্তী কোনো দেশ তাদের সীমানায় বেড়া কিংবা কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে না। কিন্তু বিএসএফের সদস্যরা আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে সীমান্তে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করেন। জানতে পেরে বিজিবি সদস্যরা তাঁদের বাধা দেন। পরে কাজ না করেই ফিরে যান বিএসএফের সদস্যরা।

বিএসএফের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে সীমান্ত এলাকায় জড়ো হন স্থানীয় বাসিন্দারা। আজ শুক্রবার বিকেলে পাটগ্রামের মুন্সিপাড়া সীমান্তে
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে পাটগ্রামের মুন্সিপাড়া সীমান্তের প্রধান পিলার (ডিএএমপি) ৮ / ৪১ নম্বর পিলার লাগোয়া ভারতের অভ্যন্তরে শূন্যরেখা বরাবর কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনের কাজ শুরু করেন কিছু নির্মাণশ্রমিক। সেখানে ভারতের রাণীনগর ৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অরুণ ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। খবর পেয়েই তাৎক্ষণিকভাবে রংপুর ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পানবাড়ি বিজিবি ক্যাম্পের টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে নির্মাণকাজে বাধা প্রদান করেন তাঁরা। বিজিবির আপত্তি উপেক্ষা করে বিএসএফ সদস্যরা কাজ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করলে বিজিবি টহল দল তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এর এক পর্যায়ে বিএসএফ সদস্যরা কাজ বন্ধ রেখে সীমান্তের ১৫০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে চলে যান। নির্মাণশ্রমিকেরাও চলে যান।

আরও পড়ুন

শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, সীমান্তের শূন্যরেখা বরাবর কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছিল। শূন্যরেখা বরাবর আধা কিলোমিটারে প্রায় তিন ফুট উচু কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনও করা হয়েছে। সেখানে উভয় পাশে সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। দুই পাশে বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে ৫১ বিজিবির পানবাড়ি কোম্পানি কমান্ডার জামিল আহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিজিবি টহল দলের সার্বক্ষণিকভাবে সীমান্তে অবস্থানের পাশাপাশি নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে তিনি ঘটনার বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি। বিজিবির ৫১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সেলিম আল দীনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে বিস্তারিত জানাবেন বলে জানান।

এর আগে ৭ জানুয়ারি রাতে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের ধবলসুতি সীমান্তে ল্যাম্পপোস্ট স্থাপনের চেষ্টা করে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। পরে বিজিবির বাধার মুখে সেটি সরিয়ে নেয়। এরও আগে ১ জানুয়ারি পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নের সরকারপাড়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও ল্যাম্পপোস্ট স্থাপনের চেষ্টা করে বিএসএফ। তবে বিজিবির প্রতিবাদ ও বাধার মুখে বিএসএফ সদস্য ও নির্মাণশ্রমিকেরা সেখান থেকে চলে যান।

আরও পড়ুন